চলমান লকডাউনে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। পাইকারিতে মানভেদে কেজি প্রতি ২ টাকা করে বস্তায় মানভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষ। লকডাউন চলমান থাকায় এখানকার একটি বিশাল অংশ কাজ হারিয়ে এমনিতেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চালের মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় এ শ্রেণির মানুষের এখন নাভিশ্বাস।
শৈবাল নামের একজন ক্রেতা বলেন, লকডাউনে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে মিলছে না স্বস্তি। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে অনেক কিছুই। সব কিছুই অচল থাকায় অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের রোজগারও নেই বলে তিনি জানান।
কয়েকজন দোকানদার বলেন, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী আড়ত থেকে পাইকারি দামে চাল কিনে ভ্যান বা ছোট পিকআপে করে আনতে হয়। লকডাউন পরিস্থিতিতে চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। উপায় না দেখে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে পণ্যগুলো দোকানে আনতে হয়। তাই বস্তাপ্রতি কিছু বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা মানভেদে দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান লকডাউনের কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কীভাবে বাজার স্বাভাবিক রাখা যায়, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতি বছর ঈদ এলেই পণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের একটি বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এ ছাড়া করোনায় অনেক মানুষের আয় নেই। অনেকে ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। এর মধ্যে পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ অসহনীয় কষ্টে পড়বেন। তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে চাল নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছেন। তাই বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, গণপরিবহন চলাচল না থাকায় ভ্যান বা পিকআপে করে চালসহ নিত্যপণ্য স্ব স্ব এলাকায় নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বস্তাপ্রতি দাম বৃদ্ধি করেছে দোকানদাররা। চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, ঈদগাঁ, বেপারীপাড়া, হালিশহরসহ কয়েকটি বাজারে সব ধরনের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম বেড়েছে। লকডাউনে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে চালের কেজিতেও আরও বেশি নেওয়া হচ্ছে। খুচরা বাজারে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে চালের ধরনভেদে বস্তাপ্রতি দাম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর পাইকারি বাজার সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে। তার পরও বেড়েছে দাম। আবার তেমন দাম বাড়েনি বলেও দাবি করেন কিছু আড়তদার। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল মানভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, বিআর-২৮ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা, সরু জাতের চাল ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ৮০০ টাকা ও মোটা চাল ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।