শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা

বিপৎসীমার ওপরে ৮ নদীর পানি উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আরও অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা

বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেছে নদ-নদীর পানি। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। নিরাপদ বাসস্থানের খোঁজে ঘরবাড়ি ছাড়ছেন অনেকেই। সিরাজগঞ্জ থেকে গতকালের তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দিন দিন বাড়ছে। গতকাল ৮ নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র নদ-নদীর অবস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পানি কমার এ ধারা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর এই ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও জানায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৫  সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মেলান্দহের ঝাওগড়া, ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, সরিষাবাড়ীর পিংনা, ডোয়াইল, সাতপোয়া, কামারবাদ, ভাটারা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। জেলায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, জমিজমা ও প্রতিষ্ঠান। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে ৯  সেমি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  রাজশাহীতে টানা তিন দিন ধরে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকালে পানির স্তর ছিল ১৬.৮৩ মিটার। বুধবার তা বেড়ে হয় ১৬.৮৯ মিটার। বৃহস্পতিবার হয় ১৬.৯৪ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। তবে পদ্মার পানিতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।  গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। লোকালয়ে পানি কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত দেখা গেছে। বন্যার পানি বসতবাড়িতে থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই বন্যাকবলিতদের। বন্যা-বৃষ্টি ভাঙনে একেবারে নাকাল হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিতরা। বন্যায় ঘরের টিন-বেড়া আসবাবপত্র নষ্টসহ ঘরের মাটি সরে যাওয়ায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। তীব্র স্রোতে যমুনা অরক্ষিত অংশে ভাঙন অব্যাহত থাকায় শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ফরিদপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, চরমাধবদিয়া, আলিয়াবাদ, অম্বিকাপুর ও শহরের নিচু এলাকায় বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

কুড়িগ্রামের উজানের দিকে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমায় সামান্য উন্নতি হলেও ভাটি এলাকা সদর উপজেলাসহ চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাক্রান্ত হয়েছে চাষকৃত ধান, কলা ও শাকসবজির  ৭০ হেক্টর ফসলি জমি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর