শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উপকূলে চিংড়ি উৎপাদনে যত প্রতিবন্ধকতা

জোনভিত্তিক চাষ, ভেনামি চাষের অনুমোদন ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

উপকূলে চিংড়ি উৎপাদনে যত প্রতিবন্ধকতা

২০১১-১২ অর্থবছরে উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ির সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ২ লাখ ৫২ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন। এরপর টানা ১০ বছর ধরে কমেছে চিংড়ি উৎপাদন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৭ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে চিংড়ি চাষের পরিধি ও উৎপাদন আরও কমেছে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিস ও ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এমইউ সি ফুড লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনীতির মূল ভিত্তি চিংড়ি। কিন্তু চিংড়ির চাষে পরিবেশে ক্ষতি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও চিংড়ির ঘেরে পানি তুললে বাঁধে ফাটল- এসব নানা অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। এতে চাষিরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ও চিংড়ির চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা নিরসনে উপকূলের সুনির্দিষ্ট এলাকাকে ‘চিংড়ি জোন’ হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। সেই সঙ্গে চিংড়ি চাষে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। এতে উৎপাদন ২ লাখ মেট্রিক টন থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এস হুমায়ুন কবির জানান, চিংড়িকে ‘কৃষি পণ্য’ বলা হলেও ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এটাকে ‘বাণিজ্যিক পণ্য’ বিবেচনায় পাঁচ গুণ বেশি সুদ দিতে হয় চাষিদের। এ ছাড়া দেড় যুগ ধরে ভেনামি চিংড়ি আন্তর্জাতিক বাজার দখল করেছে।

পৃথিবীতে যে পরিমাণ চিংড়ি রপ্তানি হয়, তার ৭৮ ভাগ ভেনামি চিংড়ি। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক ভেনামি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমোদন দিতে হবে। তিনি বলেন, ভেনামি চিংড়ি, সহজ শর্তে ঋণ, সুদের হার কম ও অবকাঠামো উন্নয়ন করলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

একইভাবে চিংড়ির চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমছে বলে মনে করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি বলেন, খুলনার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা এবং বাগেরহাটের রামপাল, মোংলায় বাগদা চাষে জমির পরিমাণ কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অপরিকল্পিত বাঁধ সংস্কারে চিংড়ি ঘেরে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, উপকূলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জোয়ারে লোকালয়ে পানি ঢুকবে ও ভাটার সময় তা বের হয়ে যাবে। কিন্তু পাউবোর স্লুইসগেট অধিকাংশ নষ্ট থাকায় পানির এই প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ঘেরে চিংড়ি চাষ ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে খুলনা উপকূলে মৎস্য চাষে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় সম্পর্কে এক সেমিনার গতকাল বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার। তিনি সংকট নিরসনে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর