বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
বাড্ডায় মনজিল হত্যা

বাদীই পরিকল্পনাকারী শিশু সেজে জামিনে দুই আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডায় নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন মনজিল হক (৩০)। এই খুনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে খুনের রহস্য। জানা যায়, পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী নিজেই। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাহফুজুল ইসলাম রাকিব ও সীমান্ত হাসান তাকবীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা গত ২৫ অক্টোবর নিজেদের শিশু ঘোষণা করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন্নাহারের আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাল-জালিয়াতি করে নিজেদের বয়স কমিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন আসামিরা। সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মাহফুজুল ইসলাম রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়। আর গত ১২ জুনে জুরাইন থেকে গ্রেফতার হয় সীমান্ত হাসান তাকবীর।

জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মতিউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, নথি আমার কাছে নাই, তাই জামিনের আদেশের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মাহফুজুল ইসলাম রাকিবকে শিশু ঘোষণা করতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি আবেদন করেন তার আইনজীবী। গত ২৭ এপ্রিল বিচারক কামরুন্নাহার তাকে শিশু ঘোষণা করে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এর কিছুদিন পর রাকিবের বয়স ১৮ বছরের বেশি জানিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দেয় সমাজসেবা অধিদফতরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

 ৫ মাস পর গত ৮ সেপ্টেম্বর একই আদালত রাকিবকে প্রাপ্তবয়স্ক ঘোষণা করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে পাঠানোর আদেশ দেয়। ওইদিনই হাবিবুর রহমান তাকবীর নামে একটি জন্মনিবন্ধনের সনদ দাখিল করে শিশু ঘোষণা চেয়ে আবেদন করেন সীমান্ত হাসান তাকবীর। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে বিচারক কামরুন্নাহার সীমান্ত হাসানের বয়স নির্ধারণের জন্য রেডিওলজি পরীক্ষার আদেশ দেন। এরপর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকলজি বিভাগে রেডিওলজি পরীক্ষা করান।

ঢামেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর ডা. প্রদীপ বিশ্বাস সীমান্ত হাসান তাকবীরের বয়স নির্ধারণ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে সীমান্ত হাসান তাকবীরের বয়স ২২ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. শামসুদ্দিন জানান, ওই দুই আসামি নিজেদের ঘটনার সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে জাল-জালিয়াতি করে জামিন নিয়েছেন। কিন্তু তারা ঘটনার সময় প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন, যার যথাযথ তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আছে। এ ছাড়া খুনে জড়িত থাকার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও তাদের কাছে আছে।

হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জালজালিয়াতি করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে জামিন নেওয়া জঘন্যতম অপরাধ। আদালতের উচিত ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার আদেশ দেওয়া। কারণ রেডিওলজি পরীক্ষার জন্য আইনেই বলা আছে। শুধু কাগজপত্র দেখে আদেশ দেওয়া উচিত হয়নি। আর রাষ্ট্রপক্ষেরও উচিত ছিল জামিনের বিপক্ষে যথাযথ আবেদন উপস্থাপন করা।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা আফতাবনগরের বি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসা থেকে মনজিলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সিয়াম ও মনজিলের বান্ধবী শারমিন সুলতানা নিশিকে আটক করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার দিনই মনজিলের চাচা ফরুক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন বাড্ডা থানার এসআই কামরুল হাসান। এরপর মামলাটির তদন্তভার স্থানান্তর হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)। পাঁচ মাস পর সেখান থেকেও মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। চলতি বছরের গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের শের শাহ কলোনি থেকে মনজিলের সৎভাই ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

সর্বশেষ খবর