ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ ১০৬ বছরে পা দিয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করেছে প্রাক্তন ছাত্র সমিতি। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর কুন্ডি ও কাকিনার জমিদার, তাজহাট মহারাজাসহ এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অনুদানে ৩০০ একর জমির ওপর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এ কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ব্রিটিশ-শাসিত বাংলার গভর্নর টমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল। তাঁর নামানুসারেই কলেজের নামকরণ হয়। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ কলেজে আইএ ও বিএ ক্লাস খোলার অনুমতি দেয়। সেই থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য কলেজটির পঠন-পাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। জার্মান নাগরিক ড. ওয়াটকিন ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ ২১ বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
এখানে লেখাপড়া করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেত্রী জাহানারা ইমাম। তিনি ১৯৪৪ সালে এখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান, দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার আনিসুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়া, নজরুল-গবেষক, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার শাহ আবদুল হামিদ, প্রখ্যাত ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই, ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারের হিন্ডবার্ন সিটির সাবেক মেয়র আলতাফুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এম আবদুর রহিম, চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন, বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি ও ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী ও তেভাগা আন্দোলনের নেতা মণিকৃষ্ণ সেনসহ অনেকেই এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন উর্দু বিভাগের অধ্যাপক শাহ্? মোহাম্মদ সোলায়মান, রসায়নের অধ্যাপক আবদুর রহমান ও অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়, দর্শনের অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, বাংলার অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, গণিতের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায় এবং অধ্যাপক কালাচাঁদের স্ত্রী মঞ্জুশ্রী। একাত্তরে শহীদ শিক্ষার্থীরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মুখতার ইলাহী চিনু, গোলাম গৌস নওশা, শরিফুল আলম মকবুল প্রমুখ। জনপ্রিয় ছাত্রনেতা চিনু একাত্তরে কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।