মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটজুড়ে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য

ধর্মঘটের নামে জিম্মি যাত্রী, দিনভর চরম দুর্ভোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

সিলেটজুড়ে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য

সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে গতকাল দক্ষিণ সুরমায় রাস্তায় ট্রাক রেখে অবরোধ করেন শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে গতকাল মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। ধর্মঘটের নামে দিনভর সিলেটের বিভিন্ন সড়কে নৈরাজ্য চালিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। গাড়ি দেখলেই তারা সদলবলে গিয়ে আটকে চালক ও যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছেন। লাঠি হাতে তেড়ে গিয়েছেন চালকদের দিকে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট গাড়ি আটকে চালক ও যাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট জানান, নগরীর চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিটি করপোরেশনের শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, সিলেটের বিভিন্ন সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল ভোর ৬টা থেকে সিলেট বিভাগে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি। সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট কদমতলী ও কুমারগাঁও টার্মিনালে অবস্থান নেন। তাদের বাধার কারণে এ দুই টার্মিনাল থেকে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারী কোনো বাস ছেড়ে যেতে পারেনি। এ ছাড়া নগরীর হুমায়ুন রশিদ চত্বর, চন্ডিপুল, তেমুখীসহ বিভিন্ন স্থানে দিনভর পিকেটিং করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

 বাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ যে কোনো ধরনের যানবাহন দেখলেই তারা ছুটে গিয়ে থামিয়েছেন। এরপর জোর করে চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে হেনেস্তা করেছেন। অনেক স্থানে যাত্রীদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তারা। দিনভর যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে কলে স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ ছিল রেলস্টেশনে। কিন্তু টিকিট না পেয়ে বেশির ভাগ যাত্রীকে ফিরে আসতে হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী বহনকারী যানবাহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকলেও রাস্তায় বের হয়ে যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়তে হয় পরীক্ষার্থীদের। রিকশায় করে তাদের যেতে হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। বিশেষ করে দূরের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যেতে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের কারণে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এর ফলে সাধারণ যাত্রী, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী জানান, সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ওপর দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার, সিলেটের ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ, মেয়াদোত্তীর্ণ সব সেতুর টোল আদায় ও লিজ বন্ধ করা, পৌরসভার নামে টোল আদায় বন্ধের দাবিসহ আরও কিছু দাবি বাস্তবায়নের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘট চলাকালে পরিবহনগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের দাবি নেমে নিলে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করব। সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের কারণে জেলা শহরের মল্লিকপুর বাস টার্মিনালসহ জেলার কোনো জায়গা থেকে বাস ছেড়ে না যাওয়ায় দূর-দূরান্তের যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।  দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশাসহ বিকল্প বাহনে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন তারা। জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির বলেন, দাবি মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস চালানো শুরু করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর