বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরাপত্তাহীনতায় বরিশালের নৌযাত্রীরা

হচ্ছে একের পর এক খুন, নানা অপকর্ম চলছে নিয়মিত

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। বিলাসিতায় লঞ্চগুলো দেশ সেরা হলেও এগুলোতে যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ঠুনকো। একেকটি লঞ্চে দুই থেকে তিনজন নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও তারা যাত্রীদের নিরাপত্তার চেয়ে মালিকের এবং নিজের স্বার্থ রক্ষায় স্বোচ্চার। এই সুযোগে লঞ্চগুলোতে নির্বিঘ্নে হত্যাসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে একের পর এক। এ অবস্থায় যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চে চারজন খুন হয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের লস্কর কেবিনে শারমিন আক্তার নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বরিশাল আসা এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের ৩৯১ নম্বর কেবিনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক নারীকে। এর দুই মাস পর ১৭ নভেম্বর একই রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের ছাদে শামীম হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই একই রুটের ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৮ লঞ্চের কর্মচারী কেবিনে শ্বাসরোধ করে আঁখি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে এবং ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট এমভি পারাবাত-১০ লঞ্চের কর্মচারী কেবিনে মোহসিনা আক্তার মিনা নামে আরও এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। হালিম হাওলাদার নামে এক লঞ্চযাত্রী বলেন, বিলাসবহুল লঞ্চের কেবিনগুলো হত্যাকান্ডের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। আধুনিকতা এবং বিলাসিতায় লঞ্চগুলো দেশ সেরা হলেও যাত্রীদের জান-মালের নিরাপত্তা একেবারেই উপেক্ষিত। এসব লঞ্চের কেবিনে নানা অপকর্ম হলেও দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি যাত্রী যাতায়াত করে। ইতিপূর্বে এই রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে আনসার সদস্য রাখা হতো। কিন্তু সশস্ত্র আনসার রাখতে লঞ্চে অস্ত্রাগারের জায়গা এবং তাদের বেতন-ভাতা প্রদানে একটি বড় অঙ্ক ব্যয় হয় বলে লোকসানের অজুহাতে ২০০৬ সাল থেকে লঞ্চগুলো থেকে সশস্ত্র আনসার নামিয়ে তাদের জায়গায় দুই থেকে তিনজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনের চেয়ে টিকিট কালোবাজারিসহ নানা ধান্দায় ব্যস্ত। প্রতিটি লঞ্চের সুপারভাইজার, মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানি থেকে লস্কর পর্যন্ত সবাই রাতে তাদের থাকার স্থান যাত্রীদের কাছে ভাড়া দেন। যদিও বেতন কম হওয়ায় তারা তাদের রাতে থাকার জায়গা ভাড়া দেন বলে দাবি তাদের।  বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুরভী লঞ্চ কোম্পানির পরিচালক রিয়াজুল কবির বলেন, লঞ্চে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তারা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা আত্মীয়স্বজন পরিচয়ে থাকতে দেয়। কিন্তু অন্তরালে তারা লঞ্চে তাদের কেবিন ভাড়া দেয়। বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবিব। তিনি বলেন, লঞ্চগুলোতে তিনজন নিরাপত্তারক্ষীর কথা বলা হলেও পালাক্রমে পাহারা দেয় নামমাত্র একজন।

 লঞ্চের হাজারো যাত্রীর জন্য এমন ঠুনকো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিরাপত্তার নামে প্রহসন হিসেবে দেখছে নৌপুলিশ। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর