শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনে খবর প্রকাশ

সেই ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিল পুনাক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

সেই ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিল পুনাক

গতকাল বিকালে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ছোট বালুয়া গ্রামে ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও দুজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র এবং খাবার বিতরণ করেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২৬ ডিসেম্বর ‘আলোহীন আলোয় বেঁচে আছেন একই পরিবারের ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী’- সংবাদ প্রকাশের পর বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার ছোট বালুয়া পূর্বপাড়ার এই পরিবারের দায়িত্ব নিল পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। মানবিক উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারে ছুটে যাওয়ায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা আনন্দ প্রকাশ করেন। সমিতির সভানেত্রী আইজিপির পত্নী জীশান মীর্জা গতকাল ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রথমে ভালো মানের চিকিৎসককে দেখানো হবে। যদি ওষুধ বা অপরেশনে সুস্থ হয় তাহলে সেই সব দায়িত্ব নেবে পুনাক। পুনাক থেকে তাদের সব চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। তাদের জন্য পুনাক আরও কিছু করবে। পুনাক থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা শুনে তারা চোখের আলোয় পৃথিবী দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন। তারা পুলিশ সদস্যদের মঙ্গল কামনা করেন।

পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি বগুড়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির সভানেত্রী জীশান মীর্জা। এর আগে ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারে গিয়ে খাবার, নগদ অর্থ ও  শীতবস্ত্র বিতরণ করেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। পুলিশ সুপার ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ ও আলী হায়দার, সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হাসান, সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা, একই থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন, পুনাক বগুড়ার সহ-সভানেত্রী দিল আকতার জাহান, মাহমুদা খানম, সাধারণ সম্পাদিকা মঞ্জুরী ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ রওশন আরা মুন্নী। ভার্চুয়ালে পুনাক বগুড়ার সভাপতি ও জেলার এসপি পত্নী সুনন্দা রায় বক্তব্য রাখেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারের আসাদুজ্জামান (৮০) জানান, তিনি এক সময় ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তাররা সে সময় বলেছিলেন, তাদের জেনেটিক সমস্যার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে দৃষ্টিশক্তিহীন সদস্যদের জন্ম হচ্ছে। তাদের পরিবারের কেউ কেউ ডাক্তার দেখালে তাদেরও একই কথা বলা হয়েছে। দৃষ্টিশক্তি ফিরে না পেয়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা একই পরিবারে থাকলেও এখন আটটি পরিবারে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে নিয়ামত হোসেনের দৃষ্টিশক্তি থাকায় তিনি কলেজে লেখাপড়া করছে। তার একটা চাকরি হলে সে আমাদের দেখভাল করতে পারত বলে জানান। 

অজানা কারণে বংশপরম্পরায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে পরিবারটির সদস্যরা। এই পরিবারের ১৯ সদস্য হলেন- মৃত তমির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে আসাদজামান (৮০),  ইদ্রিস আলী (৫৫), ইউনুস আলী (৪৮), মৃত তমির উদ্দিন মন্ডলের মেয়ে এজেদা বেওয়া (৬০), মৃত মহির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে নুরুল ইসলাম (৭০), আসাদজামানের ছেলে মোশারফ মন্ডল (৪০), মিটুল (৩৪), আসাদজামানের মেয়ে মোর্শেদা (৩৬), ইদ্রিস আলীর মেয়ে আশিনুর বেগম (২৫), আশিনুর বেগমের ছেলে আজিজুর (১৬), ইউনুস আলীর মেয়ে সাবিনা বেগম (২৫), ফাতেমা (১০), সাবিনা বেগমের মেয়ে সুলতানা (৩), মৃত মুংলু মন্ডলের ছেলে সাহেব আলী (৩৫), সাহেব আলীর মেয়ে শারমিন (১৩), সাহেব আলীর ছেলে শহীদ (১০), নুরুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩০), মিটুলের মেয়ে মিতু খাতুন (১৩) ও মিটুলের ছেলে ইনসান। এই ১৯ জনের পাশে দাঁড়াল বাংলাদেশ নারী পুলিশ কল্যাণ সমিতি ও জেলা পুলিশ বিভাগ এবং জেলা পুনাক। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর