পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগসহ ১০টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৮০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর হিসেবে যৌথভাবে ‘কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন’ (কেইসি) এবং ‘চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’ (এমবিইসি)-কে পাঁচ বছর মেয়াদে নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তিনি জানান, বৈঠকে ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’ কর্তৃক পিপিপির আওতায় চট্টগ্রামে ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে যৌথভাবে কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান- কুনহুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড ও দেইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের (প্যাকেজ নম্বর-ডিআর-০১, লট-‘ই’) ড্রেজিংয়ের পূর্তকাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি করবে এক্যুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড ও নবারুণ ট্রেডার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ১টি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ৩টি সার আমদানির মোট চারটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএডিসি কর্তৃক সৌদি আরবের ‘মা’এডেন’ থেকে দ্বিতীয় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩৩৯ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিসিআইসি কর্তৃক কাতারের ‘মুনতাজাত’ থেকে ১৪তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২৪৭ কোটি ১০ লাখ ৬২ হাজার টাকা; ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ঢাকার মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই) থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড ক্রয়ে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৯৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বৈঠকে এর আগে অনুমোদিত তিনটি ক্রয়প্রস্তাবের দর সংশোধনের (ভেরিয়েশন) প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বাড়ছে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এ কাজটি করছে আবদুল মোনেম লিমিটেড।
রাজাপুর-কাঁঠালিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথরঘাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (ঝালকাঠি অংশ) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডব্লিউপি-০৪-এর আওতায় ৪টি সেতু নির্মাণের পূর্তকাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বাড়ছে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। যৌথভাবে এ কাজটি করছে রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদ ইউনূস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড ও ইসলাম ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডব্লিউপি-১-এর নির্মাণের পূর্তকাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে ব্যয় বাড়ছে ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এ কাজটি করছে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে বিসিআইসি কর্তৃক সৌদি আরবের ‘সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি’ থেকে ফার্ম ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন এবং অপশনাল ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনসহ সর্বমোট ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যে চুক্তি সইয়ের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
