বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

টিসিবির পণ্যও জুটছে না ওদের

৫৬০ টাকায় চার পণ্যের প্যাকেজ নিয়ে হিমশিম

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

টিসিবির পণ্যও জুটছে না ওদের

টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায় শত শত মানুষের লাইন। ট্রাক থামতেই হুমড়ে পড়ছেন মানুষ। রমজানের আগে টিসিবির পণ্য কেনার জন্য এমন দৃশ্য দেখা যেত নিয়মিত। কিন্তু ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরুর পর সেই দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছে না সিলেটে। ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে ৫৬০ টাকা মূল্যের চার পণ্যের প্যাকেজ কেনা বাধ্যতামূলক করায় নিম্ন আয়ের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ টিসিবির প্যাকেজ কেনার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। ক্রেতা না পেয়ে অনেক ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন বিভিন্ন দোকানে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন টিসিবির পণ্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের সাধ্যমতো পছন্দের পণ্য ক্রয় করার সুযোগ পেত। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল বিক্রি করা হয় টিসিবির পণ্য। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকের পাশে ক্রেতাদের কোনো ভিড় নেই। মাঝে মধ্যে ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে দুই-একজন এসে ৫৬০ টাকা মূল্যের প্যাকেজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ৫৬০ টাকার প্যাকেজে দেওয়া হচ্ছে ২ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল ও ২ কেজি ছোলা। এর আগে ছোলা ছাড়া বাকি তিনটি পণ্যের প্যাকেজ বিক্রি করা হতো ৪৬০ টাকায়। ফ্যামিলি কার্ডের দ্বিতীয় দফা বিতরণ কার্যক্রমে প্যাকেজের সঙ্গে ২ কেজি ছোলা যুক্ত করে ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। টিসিবির পণ্য নিতে আসা বড়বাজারের আসদ্দর আলী জানান, তাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ৫৬০ টাকা দিয়ে একসঙ্গে টিসিবির প্যাকেজ পণ্য ক্রয় করা খুব কষ্টসাধ্য। এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার করে তিনি পণ্য নিতে এসেছেন। ময়না বেগম নামের আরেক ক্রেতা জানালেন, পাঁচ সদস্যের পরিবারে তার এক ছেলে উপার্জনক্ষম। ছেলে যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এই অবস্থায় দুই লিটার তেল কিংবা দুই কেজি চিনি একসঙ্গে কেনার তার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ইফতারে ছোলা খাওয়ার কথা চিন্তাই করেন না তিনি। কিন্তু টিসিবির প্যাকেজে দুই কেজি ছোলা কিনতে হচ্ছে। বাকি তিনটি পণ্যও কিনতে হচ্ছে দুই কেজি করে। টিসিবির পণ্যের জন্য ৫৬০ টাকা জোগাড় করা তাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। ময়না বেগম জানান, তার কাছে এক লিটার তেল ও এক কেজি ডালের দাম ছিল। বাকি প্যাকেজের বাকি টাকা তিনি পাড়ার এক দোকানদারের কাছ থেকে এনেছেন। টিসিবির পণ্য কিনে তিনি নিজেরটা রেখে বাকি পণ্য দোকানদারকে দিয়ে যাবেন। টিসিবির ডিলাররা বলছেন, আগে যেখানে মানুষ টিসিবির পণ্যের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত, সেখানে এখন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দিনে ৫০০ ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রির টার্গেট করা হলেও তা পূরণ হচ্ছে না।

সারা দিনে এক-দেড় শর বেশি ক্রেতা মিলছে না। বেশির ভাগ ক্রেতা এসে ৫৬০ টাকার প্যাকেজ দেখে ফিরে যাচ্ছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারের এই উদ্যোগ খুবই মহৎ ছিল। কিন্তু ৫৬০ টাকার প্যাকেজ হওয়ায় তা নিম্ন আয়ের সব মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যদি প্যাকেজ সিস্টেম তুলে উন্মুক্ত বিক্রির ব্যবস্থা করা যেত তাহলে মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতো।

সর্বশেষ খবর