রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র কুমারপাড়া। মোড় থেকে বোয়ালিয়া থানার দিকে যেতেই ডান দিকে চোখে পড়বে একটি নয় তলা ভবন। সোয়া ২ কাঠা জমিতে আট তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নয় তলা। রাজশাহী নগরীতে পাঁচ বছর অগেও বহুতল ভবন ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে সমানে বেড়েছে বহুতল ভবনের সংখ্যা। এখন বিভাগীয় এ শহরে বহুতল ভবন দাঁড়িয়েছে কয়েক শ। এর মধ্যে ১০ তলা ও এর অধিক তলার ভবন অর্ধশতাধিক। নগরায়ণের ফলে হুহু করে বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না নিয়মনীতি। অভিযোগ আছে, অর্থের বিনিময়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অসাধু কর্মকর্তারা বহুতল ভবনের অপরিকল্পিত নকশা অনুমোদন দিচ্ছেন। ফলে বিল্ডিং কোড না মেনেই একের পর এক ভবন গড়ে উঠছে। বাড়ছে নিরাপত্তাঝুঁকি। আরডিএর তথ্যানুযায়ী রাজশাহী নগরীতে ২০০৯ সালে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর আগে কেবল ১০ তলা ভবন বলতে ছিল সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় জীবন বীমা করপোরেশনের ভবনটি। কিন্তু এ কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ তলা ভবনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০-এর অধিক। নগর ভবন থেকে শুরু করে আশপাশের আরও চারটি এবং সাহেববাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০টি, আলুপট্টির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সাগরপাড়া, উপশহর, বর্ণালির মোড়, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, সিপাইপাড়া, কাজীহাটা ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভবন। আর ১০ তলার নিচে এবং পাঁচ তলার ঊর্ধ্বে ভবন এখন কয়েক শ। আরডিএ-সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালে রাজশাহী নগরীতে মোট ৬০০ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এক তলা থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত ৫৬৫টি এবং ছয়ের অধিক তলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩৫টি।
২০১৪ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫০২টি। এর মধ্যে ৪৮৬টি এক থেকে পাঁচ তলা এবং ছয়ের অধিক তলাবিশিষ্ট ভবন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩৫টি। ২০১৫ সাল থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫৪টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৬টি এক থেকে পাঁচ তলা এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩৩টি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর প্রতিটি ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আরডিএর এক অথরাইজড অফিসার থেকে শুরু করে নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকা।
আর টাকা দিলেই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেও মেলে নকশার অনুমোদন। আবার মাস্টারপ্ল্যান লঙ্ঘন করেও কখনো কখনো দেওয়া হয় ভবনের অনুমোদন। পরে সেখানে বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারকে গুনতে হয় ক্ষতিপূরণ বাবদ কোটি কোটি টাকা। রাজশাহীর গৌরহাঙ্গা-সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০১ সালে। এ সড়ক প্রকল্পটি ২০০৫ সালের জুনে অনুমোদিত নগরীর মাস্টারপ্ল্যানেও উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলে সড়কপথে নতুন করে কোনো আবাসিক ও বাণিজ্যিক ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনের সুযোগ ছিল না। কিন্তু আরডিএর অথরাইজড অফিসার সেখানেও ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ছয় তলার একটি নকশা অনুমোদন করে দেন। পরে আরও পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। রাস্তাটির প্রশস্তকরণ কাজ করতে গিয়ে ২০০৯ সালে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে ভবন ভাঙতে গিয়ে অতিরিক্ত ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মালিককে। আবার ইমারত নির্মাণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার গুনতে হয়।
আরডিএর অথরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নিয়মের মধ্যে থেকেই ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। তবে ভবন মালিকরা পরে ভবন করতে গিয়ে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। আরডিএ সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলাসহ নোটিস করছে।’