টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প দামে বিক্রির জন্য ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল এবং ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সংগ্রহ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রংপুরে নির্মিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’সহ মোট ১৭টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯২৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৯ টাকা।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আটটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের চারটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৭টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৯২৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৯ টাকা। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল)-এর জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিএসপি সার উৎপাদনের কাঁচামাল রক ফসফেট বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে।
উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী : মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই, ইউএই) ২৫ হাজার মে. টন রক ফসফেট সরবরাহ করবে। প্রতি মে. টন রক ফসফেটের দাম ৩৩৪ দশমিক ৭৭ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে নবম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৯৮ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৫ টাকা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৯৮ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৫ টাকা।
রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মে. টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৯৮ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৫ টাকা।
সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রংপুর স্থাপন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১, ডব্লিউডি-২ ও ডব্লিউডি-৪ এর আওতায় পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২১ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ১০৯ টাকা। তিনি বলেন, ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৩৯ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৭ টাকা। সভায় ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট’-প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিং কাটার সাকশন ড্রেজারের মাধ্যমে ড্রেজিং’ প্রকল্পের অধীনে পৃথক ৭টি প্রস্তাবের আওতায় ১ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি (এর মধ্যে প্যাকেজ-৮ এর তিনটি লট-১ এবং প্যাকেজ-৯ এর চারটি লট রয়েছে) এতে মোট ব্যয় হবে ২৬৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
সভায় টেবিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। কমিটি প্রস্তাব তিনটিতে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্নআয়ের মানুষের কাছে কম দামে বিক্রির জন্য ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার একটি প্রস্তাব রয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ টাকা এবং ৫৫ লাখ সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ৮৯ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭৫ টাকা।
এর আগে, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় দুটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অসমাপ্ত কর্মসূচিসহ অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা ক্রয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ সংক্রান্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধিত) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট হতে এলএনজি ক্রয়ের এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
