চট্টগ্রামে প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগে। সঙ্গে আছে মৃত্যু। প্রতিনিয়তই পরিস্থিতি শঙ্কার দিকে এগোচ্ছে। অথচ মশকনিধনের প্রধান সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অনেকটা নির্বিকার। নামমাত্র স্প্রে করেই দায়িত্ব শেষ করছে সংস্থাটি। ফলে অব্যাহত আছে এডিস মশার উৎপাদন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিকে সামনে রেখে প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে কয়েকটি সেবা সংস্থাকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করে চসিক। কিন্তু দৃশ্যমান নয় এর প্রতিফলন। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অতীতে মশকনিধন কাজে স্প্রে ম্যান ছিল ২০০, এখন বৃদ্ধি করে ৪০০ জন করা হয়। আগে ফগার মেশিন ছিল ৮০টি, এখন ৩২০টি স্প্রে মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানোর কাজ চলমান আছে। নিয়মিত ৪১ ওয়ার্ডে পাঁচজন করে স্প্রে ম্যান ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে। এর সঙ্গে আছে ৪১ ওয়ার্ডে ২২০ জনের বিশেষ টিম। তবে অভিযোগ আছে, চসিক কেবল বলেই যাচ্ছে প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্প্রে করার কথা। কিন্তু বাস্তবে কাউকে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে স্প্রে ম্যানদের দেখা মিললেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। চসিকের পক্ষ থেকে ওষুধ ছিটানোর কথা বলা হলেও দায়িত্বশীলদের অবহেলায় তা যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। ফলে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না এডিস মশার উৎপাদন।
চসিকের উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, গত তিন মাস ধরে এডিস মশা প্রতিরোধে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পত্রিকায় সচেতনতা ও সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে স্প্রে ম্যান ওষুধ ছিটাচ্ছে। তবে অনেক জায়গায় ওষুধ না ছিটানো বা প্রতিদিন না যাওয়ার অভিযোগ শুনছি। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড সুপারভাইজারগণকে কঠোর মনিটরিংয়ের জন্য বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে মোট আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ১২৮ জন এবং মারা যান ১৯ জন। শুধু অক্টোবর মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১ হাজার ৮৬১ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনটি কাজ সম্পন্ন করা জরুরি। এগুলো হলো মশক, পোষক ও পরিবেশ। এ তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া কেবল নালা-নর্দমায় ওষুধ ছিটালে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হবে না। সেক্ষেত্রে সচেতনতার ওপর জোর দিতে হবে।