রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে ইতিহাস গড়তে চায় বিএনপি

গণসমাবেশ ১৯ নভেম্বর

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট বিএনপি নেতাদের রাতদিন একাকার। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। ১৯ নভেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে এই ব্যস্ততা তাদের। নগরের পাড়া-মহল্লা থেকে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত ছুটছেন তারা। দলীয় সমাবেশকে সার্বজনীন কর্মসূচিতে রূপ দিতে তারা বুঝাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সমাবেশে যোগ দিতে তারা সর্বসাধারণকে উদ্ধুদ্ধ করছেন। গণসমাবেশে চার লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতির টার্গেট দলের নেতাদের। সর্বকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ করে সিলেটে ইতিহাস গড়তে চান তারা।

সিলেটে বৃহৎ কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হলে ভেন্যু নির্ধারণ করা হয় সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠ। মাঠ ও আশপাশের রাস্তা ভরপুর হলে ধরে নেওয়া হয় সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। তাই বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য বিএনপি আলিয়া মাদরাসা মাঠকেই বেছে নেয়। শুরুতে ২০ নভেম্বর সমাবেশের তারিখ ধার্য হলেও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তারিখ এক দিন এগিয়ে আনা হয়। এই গণসমাবেশ আলিয়া মাদরাসা মাঠ ছাড়িয়ে পুরো শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়কের উভয় পাশ ও সড়ক বিভাজনে বিভিন্ন নেতার ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কসহ নগরের প্রায় সব সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে সুযোগ মিলেছে সেখানেই নেতা-কর্মীরা গণসমাবেশ সফলে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। আলিয়া মাদরাসা মাঠের পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ।

এদিকে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গণসমাবেশ সফলে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গিয়ে নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ করছেন। সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে তারা সাধারণ মানুষকে বিএনপির দলীয় এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। নেতারা বুঝানোর চেষ্টা করছেন এবারের আন্দোলন তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষের জন্যই তারা মাঠে নেমেছেন। একইভাবে মহানগরের নেতা-কর্মীরা ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন গণসংযোগ সফলে।  সিলেট ছাড়াও বিভাগের বাকি তিন জেলায়ও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন।

গণসমাবেশ সফলে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আবাসন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা, জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী প্রচার ও মিডিয়া, মহানগরের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকী অভ্যর্থনা ও সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন আপ্যায়ন উপকমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন।

প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী জানান, জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৮টি ইউনিটের মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ১২টি ইউনিটে প্রচারণা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে বাকি দুই ইউনিটেও জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে প্রচারণার কাজ শেষ হবে। কাইয়ূম চৌধুরী জানান, প্রচারণাকালে সিলেটের সাধারণ মানুষের যেভাবে সাড়া পাওয়া গেছে তাতে এই গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামবে। আশা করা যাচ্ছে সমাবেশে চার লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি হবে। ওইদিন পুরো সিলেট নগরী জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এটা হবে সিলেটের স্মরণকালের বিশাল গণসমাবেশ। সমাবেশস্থলের বাইরে চারটি বিশালাকার এলইডি প্রজেক্টর স্থাপন করা হবে। 

দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের আগের দিন থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলেও এ নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত নন সিলেটের নেতারা। জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, বিএনপির এই কর্মসূচি সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে জাগরণ তৈরি হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এই দেশেরই অংশ। যে দাবি নিয়ে বিএনপি গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে নিশ্চয়ই তারা এই দাবিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন। তাই আমরা আশা করছি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা গণসমাবেশে আসতে ইচ্ছুক মানুষকে বাধাগ্রস্ত করবেন না।

এ ছাড়া ধর্মঘট ডাকলে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন। সবমিলিয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশাবাদী। আর এরপরও ধর্মঘট ডাকলে মানুষ জানে কীভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। বিকল্প উপায় তারা খুঁজে নেবে।

সর্বশেষ খবর