রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দাম বাড়িয়েও আখ চাষ বাড়ানো যাচ্ছে না

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

দাম বাড়িয়েও আখ চাষ বাড়ানো যাচ্ছে না

আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই শুরু হয়। কিন্তু চলে না এক মাসের বেশি। আখ সংকটের কারণে বন্ধ থাকে বছরের বাকি সময়। সরকার গত ১০ বছরে পাঁচ দফায় আখের দাম বাড়িয়েছে প্রতি মণে ৮০ টাকা। তার পরেও আখ চাষ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বছরের একটি সময় রুটিন অনুযায়ী খুলছে চিনিকল। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, বিগত মৌসুমের চেয়ে এই মৌসুমে আখ চাষ কিছুটা বেড়েছে। আখের চাষ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে আখের দাম প্রতি মণে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আখ চাষের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে। আখের উন্নত জাত ও চিনি বেশি উৎপাদনে বিদেশ থেকে আখের বীজ আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।  

রাজশাহী চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১০-২০১১ মৌসুমে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আখের দাম ছিল ৮৮ দশমিক ৯৫ টাকা। ১১ টাকা ৫ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১-১২ মৌসুমে প্রতি মণ আখের দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকা। এরপর চার বছর আর বাড়েনি আখের দাম। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১০ টাকা বেড়ে দাম হয় ১১০ টাকা হয়। এক বছর পর ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে দাম হয় ১২৫ টাকা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় চাষিদের থেকে আখ কেনে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। এরপর তিন বছর দাম বাড়েনি আখের। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৪০ টাকা বেড়েছে। এ বছর ১৮০ টাকা মণ দরে আখ কিনবে রাজশাহী চিনিকল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী চিনিকলের একটি সূত্র জানায়, গত সাত থেকে ১০ বছরে আখচাষির সংখ্যা কমেছে অনেক। এক সময় চাষির সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার। বর্তমানে কমে চার হাজারের ঘরে ঠেকেছে। ২০২০-২০২১ মৌসুমে মাত্র ১৯ দিন মিল চালু ছিল। চিনি উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০২০ মৌসুমে মাত্র ৯১ দিনে চিনি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে ৬৭ দিন আখ মাড়াই চলার কথা থাকলেও চলে ৫৮ দিন। তার আগের মৌসুমে ৬৭ দিনে ৯৩ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৪৪৮ টন চিনি উৎপাদন হয়। সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর ২০২২-২৩ মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু হয়েছে। ৩২ দিনে ৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময় রাজশাহীর হরিয়ান সুগার মিলে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হবে।

রাজশাহী চিনিকলের উপমহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ২০২০-২০২১ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় ৩ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে আখের চাষ হয়েছিল। এই মৌসুমে আখচাষির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন। তার পরের বছর ২০২১-২০২২ মৌসুমে বেড়ে ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এই মৌসুমে আখচাষির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৮৫ জন। এ ছাড়া চিনিকলে চিনি মজুদ আছে ৯১ টন।

রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেন, ‘চিনিকলকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তার জন্য পাঁচ বছরের রোডম্যাপ করা হয়েছে। উন্নত জাতের আখ রোপণ করা হবে, যেন ফলন বৃদ্ধি পায়। চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি বাই প্রোডাক্ট থেকে কীভাবে অন্য প্রোডাক্টে যাওয়া যায় সেটা ভাবা হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর