বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চবিতে ছাত্রলীগের ১৭ ও ছাত্র অধিকারের একজনকে বহিষ্কার

চবি প্রতিনিধি

ছয় ইস্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। অস্ত্রের মহড়া, সংঘর্ষ-ভাঙচুর, হুমকি-ধমকি, শিক্ষক ও সাংবাদিক হেনস্তার মতো পাঁচটি ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৭ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র অধিকারের একজন কর্মীকে শাটলে নাশকতার চক্রান্তের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনটি সুপারিশ করে এই কমিটি। বহিষ্কারাদেশের পর থেকেই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলা হয়েছে। এ সময় বহিষ্কৃতরা একাডেমিক কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবেন না। ছাত্রলীগের পাঁচটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপের সংঘর্ষ, শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য হেনস্তা, সাংবাদিককে হেনস্তা ও হুমকি, আবাসিক হলে ভাঙচুর, ছাত্রীহলে মারামারিসহ আলাদা পাঁচটি ঘটনায় ১৭ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একজন ছাত্রী।

যেসব ঘটনায় যাদের বহিষ্কার : দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের চার নেত্রীর মধ্যে গত বছর ১১ আগস্ট মারামারি হয়। এ ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। কর্মরত সাংবাদিককে গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব মোহাম্মদ আতিক। গত বছর ৮ অক্টোবর আলাওল হলের কক্ষ ভাঙচুর, প্রভোস্টকে টেলিফোনে হুমকি ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম।

গত বছর ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ বিজয় এবং ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) সংঘর্ষে অস্ত্রের মহড়া, হলের দরজা-জানালা ভাঙচুর, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, কর্তব্যরত প্রক্টরিয়াল বডি ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করার ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি শিকদার, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের লাবিব সাঈদ, ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সিফাতুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাহিদুল ইসলাম এবং একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন। এ ছাড়া গত বছর ২৪ আগস্ট শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আটক হওয়া ছাত্র অধিকারের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি পর পর দুই রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চবির শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আশপাশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, আশপাশের দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- ফাইন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আমিরুল হক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের ইকরামুল হক ও দর্শন বিভাগের একই বর্ষের নয়ন দেবনাথ, বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুল হাসান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম।

এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা নিয়মিত চলতে থাকলে বিশ্বিবদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। তাই সংঘর্ষের লাগাম টানতে তিনটি সুপারিশ করে কমিটি।

ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন থাকবে। এ জন্য দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যারা ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াবেন না মর্মে অঙ্গীকার দিয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর