রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আরডিএর ৩৮০ কোটি টাকার চার প্রকল্পে ধীরগতি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আরডিএর ৩৮০ কোটি টাকার চার প্রকল্পে ধীরগতি

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ৩৮০ কোটি টাকার চার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নগরীসহ আশপাশ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ৩৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। কিন্তু সবগুলো প্রকল্পের গতিই মন্থর। কোনোটির আবার বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ক্যাম্পাসের পাশ থেকে উত্তর-দক্ষিণ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক-ফ্লাইওভার প্রকল্পে চলছে দফায় দফায় রদবদল। ইতোমধ্যে ৯ বছর পার হলেও কাজটি শেষ করতে পারেনি আরডিএ। ৮৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

আরডিএ সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগরীর অভ্যন্তরে যানজট কমাতে এবং বড় ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারসহ পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের নকশা তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং নতুন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ বেড়েছে। তথ্যমতে, আরডিএ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫.৫৫ মিটার চওড়া ও পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ রুয়েট-খড়খড়ি সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রকল্পটি তিন বছরে অর্থাৎ জুন ২০১৬-এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে এ সড়কের রাজশাহী-রাবি স্টেশনমুখী রেললাইনের ওপর ৮১০ মিটার একটি উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) যুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এর ফলে মোট খরচ ১৫৯ কোটি টাকা বাড়ে। কর্মকর্তারা জানান, উড়াল সেতুসহ প্রকল্পটির কাজ ফের ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার জন্য সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সাল পর্যন্ত কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পরে আবারও সিদ্ধান্ত হয় ফ্লাইওভারটি ডাবল লেনে এবং রাস্তাটিকে চার লেনে পরিণত করার। এর পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে ফ্লাইওভারের উচ্চতা ৭ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রাস্তার দুই পাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য নতুন পরিকল্পনাও যুক্ত করা হয়। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এবার প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার জন্য পুনর্নির্ধারিত হয়।

 পরে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এখনো প্রকল্পটি শেষ হয়নি।

রাজশাহী মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্থাটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে। ওই মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ ছিল ২০০৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানটির কাজই শেষ হয় ২০২২ সালে। ফলে সেটি আবার সংশোধিতভাবে করতে হয়েছে, যার মেয়াদকাল ২০৪১ সাল পর্যন্ত। আরডিএ এটিকে সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যান বলছে।

বারনই আবাসিক এলাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজের মধ্যে ছিল ২২৭টি আবাসিক প্লটের উন্নয়ন, বিটুমিন কার্পেটিংসহ ১ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লেন রাস্তা নির্মাণ, ৪ হাজার ৮৬ মিটার আরসিসি ড্রেন ও ১৮টি কালভার্ট এবং পুরো এলাকায় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ। ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও একটি আবাসিক এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প আছে। এ জন্য ১৮ দশমিক ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ চলছে ধীরগতিতে।

১৯৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে তালাইমারী ক্রসিংয়ে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আরডিএ। ১২ হাজার ৫১৮ দশমিক ০৮ বর্গমিটার জমিতে স্কয়ারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বেসমেন্টে থাকবে গাড়ি পার্কিং, এম্ফিথিয়েটার, আর্ট গ্যালারি ও ঝরনাঘেরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। স্কয়ারটির নিচতলায় থাকবে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, আলোকসজ্জা, ডিজিটাল স্ক্রিনসহ স্থায়ী আর্ট গ্যালারি ও জাদুঘর। দোতলায় থাকবে একটি অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট, বিলাসবহুল ল্যান্ডস্কেপ, ইমারসিভ ডিসপ্লে এবং বসার ও বিনোদনের জন্য খোলা জায়গা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে একটি ডিভাইডারসহ ২৫১ দশমিক ১৮ মিটার চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া স্কয়ারের ভিতর থাকবে নান্দনিক সাজসজ্জা ও ভূ-চিত্রকর্মের কাজ। তিনটি ভাস্কর্যের পাশাপাশি ৫২৯ দশমিক ৭৪ বর্গমিটার এলাকায় একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। ২০১৮ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

আরডিএর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জানান, তিনি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রকল্পগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, কেন বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়, সে উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর