রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপরাধের সংস্কৃতিতে জড়াচ্ছে স্কুলছাত্ররা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

অপরাধের সংস্কৃতিতে জড়াচ্ছে স্কুলছাত্ররা

সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক অসচেতনতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় খুলনায় অপরাধের সংস্কৃতিতে জড়াচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থীরা। গত ২ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়ায় মুক্তিপণের ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নিরব মণ্ডল (১৪) হত্যার ঘটনায় একই স্কুলের ষষ্ঠ, নবম ও দশম শ্রেণির পাঁচ ছাত্র গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর আগে একইভাবে খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালের ২৩ মে রাজিন হত্যা মামলার রায়ে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১৭ কিশোরকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩১ মার্চ ফুলতলা এম এম (মোজাম মহলদার) কলেজ ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র আলিফ হোসেন রোহানকে খুন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে স্কুলছাত্ররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক স্থানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ঝরে পড়া ছাত্ররাও। আধিপত্য বিস্তার করতে তারা ‘কিশোর গ্যাং’ তৈরি করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সরকারি সুন্দরবন কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন করে ছাত্রদের অনুশাসন ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মনে বেপরোয়া মনোভাব তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক অসচেতনতার কারণে স্কুলছাত্ররা অপরাধে জড়াচ্ছে। তিনি বলেন, পারিবারিক দৈন্যতায় বেড়ে ওঠা শিশুরা দ্রুত অর্থনৈতিক লাভবান হতে অপরাধ করছে। এক্ষেত্রে টিভিতে ক্রাইম পেট্রল, মোবাইলে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম অপরাধমূলক কাজে উৎসাহিত করে। আর অপরাধের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অনুকরণভিত্তিক চর্চা। জানা যায়, ২ ফেব্রুয়ারি গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে নিরব মণ্ডল নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে মোবাইলে নিরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখ কনি মিয়া জানান, মোবাইল কলের সূত্র ধরে একই স্কুলের ষষ্ঠ, নবম ও দশম শ্রেণির পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা টিভির ক্রাইম পেট্রলের পর্ব দেখে নিরবকে অপহরণের পর হত্যা করে ও তার বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার পাঁচ ছাত্র। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, অপরাধ করেও সাজা না হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা আরও বাড়ছে। আগে বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্লাবের ‘বড় ভাইয়েরা’ ছোটদের নানা ছোটখাটো অপরাধে শাসন করতেন। ভালো উপদেশ দিতেন। এখন সেই সংস্কৃতি নেই। এখন গ্রুপ তৈরি করে বখাটেরা পাড়া-মহল্লায় আড্ডা দেয়। ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের নেশায় স্কুলছাত্ররাও তাদের সঙ্গে জড়িত হয়। এক্ষেত্রে স্কুলে নিয়মিত কাউন্সেলিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর