শিরোনাম
শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

১১ বছরেও শেষ হয়নি ভোগান্তি

নজরুল মৃধা, রংপুর

১১ বছরেও শেষ হয়নি ভোগান্তি

রংপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার প্রায় ১১ বছর হতে চললেও নাগরিক সুবিধা তেমন বাড়েনি এর বাসিন্দাদের। যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশা, ফুটপাত দখল, রাস্তাঘাট, শ্যামাসুন্দরী খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ না হওয়াসহ নানা কারণে পদে পদে নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  নগর উন্নয়নে এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো মাস্টারপ্ল্যান। হয়নি রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও। নগরের বাসিন্দারা বলছেন, নগরীর জাহাজ কোম্পানির মোড় থেকে টাউন হলের সামনে যেতে স্বাভাবিক সময় লাগার কথা ৫ মিনিট। অনেক ক্ষেত্রে সময় লাগছে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশা চলাচলের কারণে নগরীতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। রংপুর সিটি করপোরেশন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে ৮ হাজার। এর মধ্যে অটোরিকশা ৫ হাজার এবং রিকশা ৩ হাজার। কিন্তু নগরীতে অটোরিকশা ও রিকশা চলছে ৩০ হাজারের বেশি। সিটি করপোরেশনের ৩৩ ওয়ার্ডে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে পাকা রাস্তা ৬৮২ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৭২২ কিলোমিটার। আরসিসি ঢালাই রাস্তা রয়েছে ২৩ কিলোমিটার। সিটি করপোরেশন এলাকার নতুন সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। কাঁচা রাস্তার অধিকাংশই নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেও ওইসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চলাচলে রাস্তায় কাদাপানি মাড়াতে হয়।

নগরবাসীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা। নগরী দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেসব এখন মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, মশক নিধন অভিযান চলমান। সিটি করপোরেশনের পুরাতন ১৫টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদন হয় প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দিনে ৭০-৮০ টন বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়। প্রায় ২৫-৩০ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয় না। এসব বর্জ্য বাতাসে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ ছাড়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়েছে এখনো। এ ১৮ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। নগরবাসীর হাঁটাচলায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায়। নগরীর প্রধান সড়ক শাপলা চত্বর থেকে কাচারি বাজার পর্যন্ত দুই পাশের ফুটপাত দখল করে রেখেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। মেট্রোপলিটন পুলিশ মাঝে-মধ্যে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা কোনো কাজে আসছে না। পথচারীরা ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

শ্যামাসুন্দরী খাল পরিষ্কার না করা, অবৈধ দখলসহ নানা কারণে এখন নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর এবং ম্যালেরিয়ার হাত থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তার মা চৌধুরানী শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এ খালটি পুনঃখনন করেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্যামাসুন্দরী খালের সম্মুখে কেলাবন্দের ঘাঘট নদী। দুই তীর অবৈধ দখল হওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে গেছে খালটি। রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হাল জরিপে ১৭০ জনকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সিটি করপোরেশন বলছে, অবৈধ দখলদারের মধ্যে ১১ জন আপত্তি দেওয়ায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ রয়েছে। রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, প্রায় ১১ বছর হতে চলল সিটি করপোরেশনের বয়স। এখন পর্যন্ত নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন হয়নি। যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী।  ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় হাঁটতে সমস্যায় পড়তে হয় নগরবাসীকে। এসব সমস্যা যেন দেখার কেউ নেই। সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান মিজু বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালের পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত পুরনো ১৮টি ওয়ার্ডকে আনা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। রংপুর সিটি করপোরেশনের আয়তন ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে রংপুর সদরের ১০টি, কাউনিয়ার সারাই ও পীরগাছার কল্যাণীসহ ১২টি ইউনিয়নের ১১২টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব এলাকাসহ ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। এখানে প্রথমবার নির্বাচন হয়েছে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর