বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীর গণপরিবহনে নামেই ই-টিকিটিং

হাসান ইমন

রাজধানীর গণপরিবহনে নামেই ই-টিকিটিং

রাজধানীর গণপরিবহনে বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য ফেরাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালু করা হয় ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। এরপর তিন দফায় ৩ হাজার ৩০৭টি পরিবহনে চালু হয় এ ব্যবস্থা। তবে এ টিকিট ব্যবস্থা চালুর প্রথম দিকে ভাড়া নৈরাজ্য একটু কমলেও ধীরে ধীরে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। অধিকাংশ বাসেই টিকিট দেন না চালক ও হেলপাররা। উল্টো টিকিটের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হলেও নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, ‘বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ই-টিকিট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। শুরুতেই সব শতভাগ সফল হয় না; তবে আমরা হাল ছাড়ছি না।’ সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাসের সহকারীদের হাতে ই-টিকিট মেশিন থাকে না। আবদুল্লাহপুর-মদনপুর রুটে আসমানী পরিবহন (ব-১১-৯৭৪০), যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে তুরাগ পরিবহন (ব-১১৫৭১৫), অনাবিল পরিবহন (ব-১৫৪৮৭২) গাজীপুর চৌরাস্তা-সাইনবোর্ড রুটে যাতায়াত করে। মোহাম্মদপুর-খিলগাঁও রুটে মিডল্যান্ড পরিবহন, মোহাম্মদপুর-ধুপখোলা রুটে মালঞ্চ পরিবহন, উত্তরা-সদরঘাট রুটে ভিক্টর পরিবহন চলাচল করে। এসব পরিবহনের বাস কন্ড্রাক্টরের কাছে ই-টিকিটিং মেশিন দেখা যায়নি। টিকিট না দিয়েই যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। বাসগুলোয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সরবরাহ করা নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হয় না। ই-টিকেটে স্থান ও ভাড়ার টাকা নির্দিষ্ট করে লেখা থাকলেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব উল্লেখ নেই। অনেক ক্ষেত্রে ১ কিলোমিটার যেতেও ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা দূরত্ব ১১ কিমি, ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এসব নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারদের বাগবিতন্ডা-হাতাহাতি ঘটছে। রাজধানীর অন্য রুটেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আজিমপুর থেকে মিরপুর রুটের বেশির ভাগ বাসে ই-টিকিট পদ্ধতিতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ‘মিরপুর সুপার লিঙ্ক’ পরিবহনের বাসে আজিমপুর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত টিকিটে লেখা ভাড়া ২৩ টাকা। আবার কলাবাগান থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এই অল্প দূরত্বে ভাড়া কেন ২৫ টাকা, তা নিয়ে হাতাহাতি এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার।

টিকিট ছাড়া ভাড়া আদায়সহ নানান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য শতভাগ ঠিক করতে আরও সময় প্রয়োজন। আমাদের টিম রাস্তায় কাজ করছে। আমিও কাজ করছি। আগে নয়জন চেকার ছিল রাস্তায়। এখন ১৯ জন চেকার কাজ করছেন, পদ্ধতিটা ঠিক করার জন্য। এখানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন, রাতারাতি ঠিক হবে না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা। আশা করি তা করতে পারব। আগে গেটলক, সিটিং সার্ভিস ছিল, এসব আমরা বন্ধ করেছি। এটিও একদিন শতভাগ হবে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হবে।’ এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টিকিটে ভাড়ার সঙ্গে দূরত্ব উল্লেখ না থাকার অনেক অভিযোগ এসেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর বাসমালিকদের চিঠি দেওয়া হয় যেন টিকিটে দূরত্ব উল্লেখ থাকে। যারা আমাদের এ নির্দেশনা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটদের বলে দেওয়া হয়েছে যেসব বাসে টিকিট দিচ্ছে না এবং টিকিট দিলেও দূরত্ব উল্লেখ নেই, তাসহ ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ জানা গেছে, সড়ক ও গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতেই ২০১২ সালে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) র‌্যাপিড পাসের মাধ্যমে ই-টিকেট দিয়ে ভাড়া আদায় শুরু করে। কিন্তু এ ব্যবস্থা সফল হয়নি। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের আটটি কোম্পানির দেড় হাজার বাসে ই-টিকেট চালু করে। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানির দেড় হাজার বাস ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হয়। পরে ১০ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থেকে ১৫টি রুটে এ ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর অন্যান্য রুটের বাসে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া আদায় শুরু হয়। এসব রুটে বাসের সংখ্যা ৭১১। বর্তমানে সব মিলিয়ে ৫৯ রুটে ই-টিকেট পদ্ধতি চালু থাকলেও সফলতা খুবই সামান্য।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর