প্রিয় কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আঙিনায় আর পদচিহ্ন পড়বে না স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের নির্মাতা ভাস্কর শামীম শিকদারের। গতকাল শেষবার প্রিয় কর্মস্থল চারুকলা অনুষদে এলেন নিথর দেহে। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই ভাস্কর বিদায় বেলায় সঙ্গে করে নিলেন সুহৃদ, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও শিল্পাঙ্গনের মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা। প্রিয় শিল্পী ও শিক্ষককে বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ভাস্কর শামীম শিকদারের মরদেহ আনা হয় ঢাবির চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও চারুকলা অনুষদ এবং বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় বরেণ্য এই ভাস্করকে।
শ্রদ্ধা জানিয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এর বাইরে একটি পরিচয় আছে, যা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। একজন নারী ভাস্কর হিসেবে তিনি বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বলিষ্ঠ ও স্পষ্টভাষী। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে তিনি সমৃদ্ধ ছিলেন। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, তাঁর চরিত্রে একটা বিপ্লবী চেতনা ছিল, যা পরে তাঁর কাজেও প্রভাব ফেলেছে। ভাস্কর্যে তিনি প্রতিকৃতির দিকে ঝুঁকে ছিলেন, তাঁর ভাস্কর্য ছিল রেখাধর্মী। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, শামীম শিকদার বাস্তবধর্মী কাজ বেশি করতেন। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি বিমূর্ত ধারণার কাজও করেছেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন নেতা-কর্মীদের নিয়ে শামীম শিকদারের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চারুকলা অনুষদ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।তাঁর ছোট ভাই নাজমুল হক শিকদার জানান, শামীম সিকদারের ছোট ছেলে লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে শুক্রবার মোহাম্মদপুরে দাফন করা হবে এই শিল্পীকে। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার।