সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানি নিয়ে মহাবিপাকে ওয়াসা

বাড়ছে লবণাক্ততা কমছে উত্তোলন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পানি নিয়ে মহাবিপাকে ওয়াসা

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহের প্রধান উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদী। কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় কমেছে কাপ্তাই হৃদের পানির স্তর। তাছাড়া হালদা নদীতে জোয়ারের সঙ্গে লবণ পানি প্রবেশ করে তা হয়ে উঠেছে পানের অনুপযুক্ত। দুই নদীর পানিতেই বেড়েছে লবণক্ততার পরিমাণ। ফলে নদী থেকে চাহিদা অনুপাতে পানি উত্তোলন করতে পারছে না ওয়াসা। কমেছে পানি উত্তোলনের পরিমাণ। এ কারণে নগরের কোথাও কোথাও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মিলছে লবণ পানি।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালদা নদীর উজান এলাকায় রাবার ড্যামের কারণে পানি নিচের দিকে আসতে পারছে না। আবার জোয়ারের পানি স্রোতের সঙ্গে প্রবেশ করলে তা নিচের দিকে নেমে আসে না। অন্যদিকে, কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ায় কমেছে পানির পরিমাণ। এমন অবস্থায় পানি উত্তোলন কমছে। ইতোমধ্যেই কর্ণফুলী নদী থেকে দৈনিক ২৮ কোটি লিটার এবং হালদা নদী থেকে ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হতো। এখন দৈনিক ৭ কোটি লিটার পানি কম উত্তোলন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন গভীর নলকূপ থেকে বিকল্প পানির ব্যবস্থা করছে। ওয়াসার ৯৫টি নলকূপ ছিল, এর মধ্যে ২৬টি বন্ধ ছিল। এগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ থেকে পানি কম ছাড়া হচ্ছে। ফলে নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে গেছে। পক্ষান্তরে হালদা নদীর উজানে পানির চাপ কমে গেছে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে মোহরা প্রকল্পের জন্য পানি সংগ্রহ করা হয়, সেখানেই লবণের পরিমাণ বেড়েছে। তবে তা আস্তে আস্তে কমে আসছে। বৃষ্টি হলে পুরোপুরি কমে যাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধি- এই তিনটি অতিপ্রয়োজনীয় কারণে হালদা ও কর্ণফুলী নদীকে যে কোনো মূল্যেই বঁাঁচাতে হবে। তিনটিই আমাদের জন্য অতিজরুরি। তাই এই দুই নদীকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে ‘সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনার’ কোনো বিকল্প নেই। সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নদীকে যেমন বাঁচানো যাবে, তেমনি আমাদের সমস্যারও সমাধান হবে।   অভিযোগ আছে, পানির প্রধান দুই উৎস নদী কর্ণফুলী ও হালদার পরিবেশের এখন নাভিশ্বাস উঠছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কবলে পড়েছে নদী দুটি। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে ২৪৯ টনই হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এর মধ্যে ৩৫.৬১ ভাগ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। এসব বর্জ্য প্রতিদিনই নানাভাবে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এ কারণে ছড়াচ্ছে রোগবালাই, বাড়ছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে হালদা নদীর উজান এলাকা ফটিকছড়িতে নির্মিত হয় র‌্যাবার ড্যাম।  এ কারণে উজানের পানি নামতে পারে না। ফলে মরতে বসেছে পানির প্রধান দুই উৎস নদী।  চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে নগরে দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। ওয়াসা চারটি পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া পানি শোধনাগার ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে দৈনিক পাওয়া যায় ২৮ দশমিক ৬ কোটি লিটার পানি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর