শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্যুয়ারেজ ব্যবস্থায় আশার আলো

প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পরও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি চট্টগ্রাম ওয়াসা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্যপানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটার হবে। এ ছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্ল্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে। ফলে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে।

অথচ নগরে সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পরও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে প্রতিনিয়ত নদীতে তরল বর্জ্য পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি। দূষিত করছে চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিবেশ। এ ছাড়া আগামীতে চট্টগ্রাম নগরের সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কাও আছে।

তবে বিলম্বে হলেও ওয়াসা প্রথমবারের মতো পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের’ অধীনে নগরে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। এখন প্রকল্প এলাকা হালিশহরে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ২৮ শতাংশ। ফলে চট্টগ্রামের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে আশার আলো। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের কাজ শেষ হওয়ার কথা। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, বিলম্বে হলেও চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের নানা কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে প্রকল্প এলাকা হালিশহরে সাগরপাড়ে পাইপলাইন স্থাপনের জন্য পাইলিংয়ের কাজ, বিভিন্ন স্থানে ফাউন্ডেশনের ঢালাই এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজ। তিনি বলেন, স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলা কঠিন কাজ। পানির পাইপ চালানো যত সহজ, স্যুয়ারেজ পাইপ চালানো তত কঠিন। একটি সড়কে অন্য পাইপ ১ দশমিক ২ মিটার বা ৪ ফুট গভীরে স্থাপন করলে হয়। কিন্তু স্যুয়ারেজের পাইপ বসাতে হয় সর্বোচ্চ ১২ মিটার নিচে। চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পাইপের স্তর ঠিক রাখতে নগরীর কিছু এলাকায় ৪০ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করে পাইপ স্থাপন করতে হবে। এটা না হলে বর্জ্য পাইপের বদলে ম্যানহোল দিয়ে ওপরে উঠে আসবে। তাই কাজটি কঠিন। প্রসঙ্গত, নগরের বাসাগুলোতে সেপটিক ট্যাংক থাকলেও তা নানাভাবে নালায় চলে আসে। নগরে ২০ হাজারের বেশি বহুতল ভবন আছে। এসব ভবনের অন্তত অর্ধেক ট্যাংকের নিচে ফুটো। এ ফুটো দিয়ে বর্জ্য ভবনের পাশের ড্রেনে আসে, এরপর নালা-নর্দমা ও খাল হয়ে নগরের সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অধীনে পুরো নগরকে ছয় ভাগে ভাগ করে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ প্রকল্পের আওতায় আনতে নগরের হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির ওপর দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা দৈনিক প্রায় ১০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলা হবে। অপর প্লান্টটি ফিক্যাল প্লাসের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা পয়োবর্জ্য) মাধ্যমে সংগ্রহ করে দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নগরকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপের নগরের হালিশহর ক্যাচমেন্টভুক্ত এলাকাসমূহ হলো- এনায়েত বাজার ওয়ার্ড, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, রামপুর ওয়ার্ড, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, পশ্চিম মাদারবাড়ী, পূর্ব মাদারবাড়ী, আলকরণ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গি বাজার, দক্ষিণ মধ্য হালিশহরের আংশিক। প্রায় ৩৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পয়োনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পয়োপাইপলাইন স্থাপনের আওতায় পুরো এলাকাটিকে এ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মহানগরীর যেসব এলাকাকে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে না, সে সব জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪১ ভাগ নিরাপদ সেপটিক স্ল্যাজ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

 যেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর