রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম ওয়াসা

লবণাক্ত পানির বিরূপ প্রভাব মানুষের শরীরে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে গত প্রায় ২০ দিন ধরেই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ছয় গুণ বেশি লবণ পাওয়া যাচ্ছে। পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ দেখা দেওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব মানুষের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণের কারণে মানবদেহে বেড়ে যাচ্ছে সোডিয়ামের পরিমাণ। তাছাড়া, পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় লবণের কারণে কিডনি সমস্যা ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে এখন রোগী বাড়ছে।

জানা যায়, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানির সরবরাহ কমেছে। ফলে কর্ণফুলী নদীতে মিঠা পানির পরিমাণও কমে গেছে। তাছাড়া, রাবার ড্যামের কারণে হালদার উজানে পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এ দুটি নদীই ওয়াসার পানি উৎপাদনের মূল উৎস। এই দুটি নদীর পানিতেই বাড়ছে লবণাক্ততার পরিমাণ। এতে ওয়াসার সরবরাহ করা অনেক এলাকার পানি পান করা তো নয়, ব্যবহার করাও যাচ্ছে না। তাছাড়া অনেক এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে পানি পান করায় তৈরি হচ্ছে নানা রোগ। নগরের রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হাসান বলেন, গত ১৫ দিন ধরেই ওয়াসার সরবরাহ করা বাসার পানিতে লবণাক্ততার হার বেশি। তাই বাধ্য হয়ে কিনেই পানি পান করতে হচ্ছে। তাছাড়া, এ পানি ব্যবহার করলে হাত-পা খসখসে হয়ে যাচ্ছে। পরে আবার শরীরে চুলকানি বেড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করলেও লবণের হার কমছে না। পানি নিয়ে এক মহা সমস্যায় আছি।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম বলেন, পানিতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে লবণের পরিমাণ বেশি হলে শিশুরা নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে আছে, খিঁচুনি ওঠা, বমি হওয়া, কিডনিতে প্রভাব পড়া, ঝিমুনি ভাব আসা ও শরীর ব্যথা হয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মোট ৯৩টি শয্যা থাকলেও গতকাল ভর্তি ছিল ২২০ জন। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন ডায়রিয়া রোগী। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন প্রায় ২০ শতাংশ রোগী বেশি।

চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল হুদা বলেন, পানিতে লবণের পরিমাণ বাড়লে প্রেশার বেড়ে যায়। প্রেশার বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, কিডনিতেও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, কাপ্তাই লেকে পানির স্বল্পতা এবং হালদা নদীর উজান থেকে পানির স্রোত কমে গেছে। তাই হালদা ও কর্ণফুলীর উজান থেকে আসা পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। ফলে পানিতে লবণাক্ততার হার কিছুটা বাড়ছে। এ জন্য জোয়ারের সময় পানি উত্তোলন কমিয়ে ভাটার সময় প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হচ্ছে। বৃষ্টি পড়লে এ সমস্যা আর থাকবে না। জানা যায়, ওয়াসা বর্তমানে দৈনিক মোট ৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। তার মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-০১ থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-০২ থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার এবং গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ৪ কোটি লিটার। নগরে বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ৫৫ কোটি লিটার। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন আরও কমিয়ে ৪২ কোটি লিটারে আনা হয়েছে। ওয়াসার আবাসিক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। তবে অধিকাংশ লাইনই পুরনো।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর