বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শর্তের গ্যাঁড়াকলে বেহাল সিসিক

৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তা ডিসেম্বরে শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট নগরীর রাস্তাঘাট, ছড়া-খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার থেকে ১২ শ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বরাদ্দে মন্ত্রণালয় থেকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল শর্ত। শর্তানুযায়ী সিটি করপোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ ভাগ টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে তবেই সরকারের পক্ষ থেকে বাকি ৮০ ভাগ বরাদ্দ দেওয়ার কথা। ইতোমধ্যে সরকার থেকে ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সিটি করপোরেশন নিজস্ব তহবিলের টাকা জমা দিতে না পারায় বাকি ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা জমা দিতে না পারলে শেষ হয়ে যাবে প্রকল্পের মেয়াদও। ফলে নগরীর উন্নয়নে গৃহীত অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানান, সিলেট মহানগরীর রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, সংস্কার, রাস্তায় ডিভাইডার নির্মাণ, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কার এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়- এই ১ হাজার ২৮ কোটি টাকার ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা সিসিককে নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যবস্থা করতে হবে। সিসিক নিজের ভাগের টাকার ব্যবস্থা করতে পারলেই সরকারের পক্ষ থেকে বাকি ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৯৮৩ কোটি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ বরাদ্দ দিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। সূত্র জানান, এ বরাদ্দকে টার্গেট করে সিসিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সিসিকের আয়ের খাত সীমিত হওয়ায় নিজস্ব তহবিল থেকে কোনো টাকাই দিতে পারেনি। করোনা মহামারি পরবর্তীতে আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিজস্ব তহবিলের টাকা জমা না দিয়েই ইতোমধ্যে সরকারের কাছ থেকে কয়েক দফায় বরাদ্দ আনা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। তবে এবার আর কোনো অজুহাতই শুনতে চাচ্ছে না সরকার। নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের ব্যবস্থা করা না গেলে কোনো বরাদ্দ মিলবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সিসিক কর্তৃপক্ষকে। ফলে নগরভবন কর্তৃপক্ষ পড়েছেন বিপাকে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, শর্তানুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ শতাংশ অর্থের জোগান দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। যে কারণে সরকারের কাছ থেকে অবশিষ্ট ২৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থের ব্যবস্থা করা না গেলে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হবে। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের সব সিটি করপোরেশনকে শর্ত ছাড়াই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশনের জন্য ২০ ভাগ নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। অথচ সিসিকের নিজস্ব আয়ের খাত খুবই সীমিত। যে কারণে এ বরাদ্দ নিয়ে সিসিককে অনেক কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে। সিসিক সূত্র জানান, ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা টার্গেট করেই নগরীর রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন তাদের ২০ শতাংশের কোনো টাকারই ব্যবস্থা করতে পারেনি। কেবলমাত্র সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৭০০ কোটি টাকা দিয়েই এতদিন সড়ক ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে বাকি ২৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে হলে শর্তানুযায়ী সিসিককে তার নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হচ্ছে। কিন্তু তহবিলশূন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে অনেক প্রকল্প অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায়ই ফেলে রাখতে হচ্ছে সিসিককে। এ ছাড়া নতুন করে কোনো প্রকল্পের কাজও শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর