বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

এক বছরেও হয়নি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি

নেতৃত্ব বাছাইয়ে দ্বিধায় কেন্দ্র

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয় ২০২২ সালের ৩০ মে। সে হিসাবে এক বছরেও হয়নি কমিটি। এ নিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নানামুখী প্রতিক্রিয়া আছে। একদিকে বিতর্কমুক্ত কোনো নেতা খুঁজছে কেন্দ্র, অন্যদিকে নগর রাজনীতির দুই পক্ষ সভাপতি ও সম্পাদক পদে যেমনই হোক, অন্তত একটি পদে নিজের অনুসারীকে স্থান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণার পর অভিযোগ ওঠে, যোগ্যদের বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত মো. শাহাজাহানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে একটি সম্পাদকীয় পদে এক রাজাকারপুত্রকে অন্তর্ভুক্তিরও অভিযোগ আছে। গত বছরের ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটিতে অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের মূল পদগুলোয় দায়িত্ব দেওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। এসব কারণে কেন্দ্র বিব্রত হয়েছে। তাই নগর কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে কেন্দ্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতা বলেন, দল ও সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ কাজে আসবেন এমন নেতাদেরই উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম নগর রাজনীতিতে দুটি পক্ষ নিজেদের প্রভাব জাহির করে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় না রেখে উপায় নেই। তিনি বলেন, দল, সংগঠন ও নেতা-কর্মীদের জন্য ভালো, অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ইমেজের ও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন- এমন নেতাদের মূল পদগুলোতে নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ হিসাব-নিকাশ করছে কেন্দ্র। যুবলীগের একাধিক সূত্র জানায়, সভাপতি ও সম্পাদক পদে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার পছন্দের ব্যক্তিরা কেন্দ্রের সমীকরণের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাচ্ছে না। এ কারণে কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় আছে। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণার পর শীর্ষ পদের একাধিক নেতার পদত্যাগে কেন্দ্র সমালোচনায় পড়ে। এ কারণে চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ প্রত্যাশিত পদ না পেলে পদত্যাগ করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতাকে ফোন করেছেন।

নগর যুবলীগের সম্মেলনের সময় সভাপতি পদে ২৮ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত দেন। এসব প্রার্থী প্রায় সবাই সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ আলোচনায় আছেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের ছেলে নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম দিদার, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম আর আজিম, আসিফ মাহমুদ, দিদারুল আলম, দেবাশীষ পাল দেবু।

এক বছর ধরে এসব প্রার্থীর বিভিন্ন বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতারা। এরপরও তারা নতুন কমিটি দিতে পারেননি। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কাছে নতুন করে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সভাপতি ও সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক ইতিহাস ও বর্তমান রাজনীতি, পেশা, বিভিন্ন সময়ের নির্বাচনী কর্মকান্ড, আচার-ব্যবহার, সাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রার্থীদের কেউ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জনশ্রুতি, প্রভাব বিস্তার, মাদক ব্যবসা কিংবা সেবনে যুক্ত কি না সব বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন যুবলীগের সর্বোচ্চ মহল।

এদিকে দীর্ঘ সময় কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ পদপ্রত্যাশীরা। সভাপতি পদপ্রত্যাশী এম আর আজিম বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করি। দল ও সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে কখনো যাইনি। বাকি জীবনেও যাব না। সংগঠন যাদের ভালো, যোগ্য মনে করবে, যখন প্রয়োজন মনে করবে, তখনই কমিটি দেবে। এ নিয়ে আক্ষেপের কিছু নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর