নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের আংশিক শুনানি হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, এ শুনানি আর পেছানো হবে না, পরবর্তী তারিখেই শুনানি শেষ করা হবে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। কিছুক্ষণ শুনানির পর কায়সার কামাল বলেন, এ মামলায় মূল শুনানি করবেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি অসুস্থ, যে কারণে শুনানি পেছানোর আরজি জানাচ্ছি। তখন আদালত বলেন, আমরা দুদকের বক্তব্য শুনি, আপনি নোট নেন। আমরাও নোট নিচ্ছি। এরপর শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তার আগে শুনানিতে কায়সার কামাল বলেন, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছিল।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হয়নি। হাই কোর্ট মামলাটি বাতিল করেছেন। সেই মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে দুদক এখন পর্যন্ত আপিল করেনি। একই ইস্যুতে মামলায় খালেদা জিয়া মোকাবিলা করলে শেখ হাসিনা কেন করবেন না? এর জবাবে শুনানিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এ আবেদনটি করা হয়েছে। তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) দেখাতে হবে বিচারিক আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশে কোথায় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। আমরা দেখাব আদেশের কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে কেন আপিল করেনি, এটি এ মামলার বিষয়বস্তু না। কেন ওই মামলাটি বাতিল করেছেন, তার বিশদ ব্যাখ্যা হাই কোর্টের রায়ে আছে। খালেদা জিয়ার মামলা আর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা এক না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
গত ১৯ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। ওইদিন খালেদা জিয়াসহ নয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত ২৩ মে সাক্ষ্য দেন দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। তিনি এ মামলার বাদী। তার আগে গত ১৭ মে মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সে আবেদনেরই শুনানি চলছে।