আমদানির প্রভাবে বাজারে দাম কমেছে ডিম ও আলুর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণের প্রায় দুই মাস পর ডিম বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। আমদানির কারণে আলুর দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা কমেছে। এ ছাড়া বাজারে দাম বেড়েছে চাল, ডাল ও চিনির। গতকাল রাজধানীর রায়েরবাগ, মালিবাগ বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মালিবাগ বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। অন্যান্য বছরে এ সময় আলুর দাম থাকত ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। প্রায় দুই মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে এ দর কার্যকর হয়নি। উল্টো দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছিল। যা গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতি এবং ভারত থেকে আলু আসার পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এর মধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুব কম। ফলে বাজারে তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না। দাম কিছুটা কমে এলেও নাগালের মধ্যে আসেনি। ভারত থেকে ডিম আসায় কমছে দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় ১ টাকা কমেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় উৎপাদন বাড়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে, অবরোধের কারণে চাহিদায় কিছুটা টান পড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমে এসেছে। তবে খামারিরা বলেছেন, তারা লাল ডিম ৮ টাকা ৪০ পয়সা ও সাদা ডিম ৮ টাকায় বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ৪৮ টাকা। এক হালি ডিম দুই সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকার বিক্রি হয়েছে। এদিকে, বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।পাশাপাশি বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রয়েছে। এতে দামও কিছুটা কমছে। দুই-তিনটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। দীর্ঘদিন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার পর বাজারে চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পছন্দের মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে বেড়েছে সব রকম ডালের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৪০, মোটা মসুর ডাল ১১৫, মুগডাল ১৪৫, খেসারি ৭০ টাকা, বুটের ডাল ৮০ ও ছোলা ডাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব রকম ডালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে আবারও চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। ৮-১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে পণ্যটির দাম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ডিলার পর্যায়ে (পাইকারি) প্রতি কেজি চিনির দাম রাখা হচ্ছে ১৩৬-১৩৮ টাকা। খুচরায় প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।এদিকে, চট্টগ্রামের বাজারে এসেছে শীতকালীন শাকসবজি। তবে দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। আবার অনেক ব্যবসায়ী অবরোধসহ নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছেন। তবে কয়েক সপ্তাহ পর শাকসবজির দাম ক্রেতাদের নাগালে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার ও কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ধনিয়া পাতা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ২৫ টাকা, শিম ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়াও বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৭০-২০০ টাকা, রুই ২৬০-৩০০ টাকা, কাতলা ২৫০-৩০০ টাকা, মৃগেল ২০০-২৬০ টাকা ও পাঙাশ ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছের কেজিতে দাম কমেছে ২০-৫০ টাকা। তবে সামুদ্রিক ও দেশি চাষের মাছের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কিছুটা কমেছে। তার মধ্যে লইট্টা এখন মানভেদে ৯০-১২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাডা ২৫০-২৮০ টাকা, ছোক্কা ২২০-২৬০ টাকা, বাইলা ২৮০-৩৫০ টাকা, সুরমা ৩০০-৪০০ টাকায় এবং চিংড়ি আকারভেদে ৩৮০-৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের বাজারে। ভরপুর শীতকালীন মুলা, বাঁধাকপি, শসা, ধনিয়া পাতা, লাউ, বেগুন ও টমেটোসহ নানা সবজি। সরবরাহ বেশি হলেও কমেনি দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে অনেক সবজি; এতে কমেছে জোগানও। আর এ কারণেই বাড়তি দাম। এর মধ্যে অবরোধে গাড়ি ভাড়াও বেশি দিতে হচ্ছে। গ্রাম থেকে সবজি আনতে নানা হয়রানি হচ্ছে। এসব কারণে সবজির দাম তেমন একটা কমছে না। অবরোধে সবজি আনতে খরচ একটু বেশি লাগছে। তাই আমরা দু-এক টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে প্রতিদিন কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হতো। এখন তা কমে গেছে।