খুলনা বিভাগের চাষিরা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ক্লাস্টার নামে একটি নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন। এতে অল্প সময়ে চিংড়ির আকার বাড়ছে। ফলে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ অবস্থায় চিংড়ি চাষের এ পদ্ধতি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। তাঁরা জানান, ক্লাস্টার পদ্ধতির ব্যবহারে চিংড়ির বৃদ্ধির হার বেড়েছে। আগে আলাদাভাবে চাষাবাদে চার থেকে পাঁচ মাসে ৫০-৬০টি চিংড়িতে ১ কেজি হতো। এখন সেখানে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ২০-২৫টি চিংড়িতে একই ওজন মিলছে।
জানা যায়, জলবায়ুু পরিবর্তন, মানসম্মত পোনার সংকট, ঘেরে গভীরতা কম থাকাসহ নানা কারণে দক্ষিণাঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে কমছিল চিংড়ি উৎপাদন। এতে চাষির আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাহত হয় চিংড়ি রপ্তানি। এ অবস্থায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে গলদা-বাগদার সমন্বিত চাষের উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন প্রান্তিক চাষিরা।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পানিখাতি বিলের দেড় শ চাষি ছয়টি ভাগে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে সমন্বিত চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। প্রশিক্ষণের পর ঘেরে গভীরতা বৃদ্ধি, পোকামাকড়ের প্রবেশ ঠেকাতে নেটের বেষ্টনী, উন্নত পোনা, খাবারসহ পরিকল্পিত চাষব্যবস্থায় বেড়েছে হেক্টরপ্রতি চিংড়ির উৎপাদন। সেই সঙ্গে সমন্বিত চাষে কার্পজাতীয় মাছ ও ঘেরের আইলের সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
দিঘলিয়ার ৫ নম্বর ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা চাষি রমজান আলী খান জানান, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে পাশাপাশি ২৫ জন চাষি একই সঙ্গে ঘের পরিচর্যা ও পোনা ছাড়ার কাজ করেন। প্রতিটি ঘেরের গভীরতা ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ির উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি জানান, আগে ঘেরগুলোয় হেক্টরপ্রতি ৭৫০-৮০০ কেজি গলদা উৎপাদন হতো। আর এখন ১২০০-১৩০০ কেজি গলদা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে হেক্টরপ্রতি ৩৫০-৪০০ কেজি সাদা মাছও উৎপাদন হচ্ছে। দিঘলিয়ার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৩০০ স্থানে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এতে চাষিরা নিজেদের খরচে ঘেরে গভীরতা বৃদ্ধি ও নেটের বেষ্টনী দিয়ে কাজ করছেন। আর পোনা সংগ্রহ, ঘের প্রস্তুত, চুন, ব্লিচিং ও খাবার বাবদ খরচ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।