খুলনায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। তুচ্ছ ঘটনায় হানাহানি-মারামারি, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে হামলা, খুন-জখমের ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে। গত ২৮ অক্টোবর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অপরাধ বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনা মহানগরী ও জেলায় সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ দমনে পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি। ফলে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীরা আধিপত্য বিস্তার করছে। জানা যায়, ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়ায় খুলনা মৎস্য বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আমির হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এর দুই দিন আগে তাঁকে লক্ষ করে গুলি করা হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ২১ নভেম্বর প্রকাশ্যে সোনাডাঙ্গা ক্লাসিক বোর্ড সেন্টারে হামলা চালিয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা লুট করা হয়। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। ২ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে শেরেবাংলা রোডে মো. রাসেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা ও একই রাতে কমার্স কলেজ এলাকায় যুবদল নেতা হাবিবুর রহমানকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশ ফার্নিচার ব্যবসায়ী সমিতি, খুলনার সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘দিনদুপুরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।’ খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর দাশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে মহানগর ও জেলার থানাগুলোয় ২৭৭টি মামলা রেকর্ড হয়। যা আগের মাসের তুলনায় ৪৫টি বেশি। এর মধ্যে ৫টি হত্যা, ১১টি ধর্ষণ, চুরি ৩২টি, ডাকাতি ২টি, অস্ত্র আইনে ৬টি, নারী নির্যাতন ৩২টি, অপহরণ ৫টি ও মাদকের মামলা হয় ৯৯টি। খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও লবণচরা থানা এলাকা অপরাধপ্রবণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, খুলনার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়েছে। ৫ আগস্টের পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থেকে সন্ত্রাসীরা আবার এলাকায় ফিরেছে। আগের মতোই প্রভাব বিস্তার করে মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে।’ তবে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। নগরীতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জায়গা হবে না।’