লোকসানের ভারে নুয়ে পড়া রাজশাহী চিনিকলকে লাভজনক করতে কর্তৃপক্ষ নতুন একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এই রোডম্যাপের বদৌলতে চিনিকলটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লাভজনক অবস্থানে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, রাজশাহী চিনিকলে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ ৪০৫ টাকা ৬৮ পয়সা। কিন্তু সেই চিনি মাত্র ১০০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার দরের চেয়ে উৎপাদন খরচ চারগুণ হওয়ায় গত কয়েক বছরে কয়েক শ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তবে রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেছেন, ‘চিনিকলকে লোকসান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লাভের মুখ দেখবে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকারখানাটি।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, চাষের জমি কমলেও চিনিকল কর্তৃপক্ষের তদারকি ও সুপরামর্শে চাষিরা আখের পরিচর্যা করায়, পড়ে যাওয়া ঠেকাতে বেঁধে রাখায়, সঠিক সময়ে সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও স্প্রে করায় ফলন বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে যেখানে ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে মাত্র ২৬ হাজার ৪৫ টন আখ চাষ হয়েছে, সেখানে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৫৪০ একর জমি থেকে প্রায় ৪২ হাজার টন আখ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আখের দাম ১৮০ টাকা মণ থেকে বৃদ্ধি করে ২২০ টাকা করেছে সরকার। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আবারও আখ চাষে ফিরছেন। ফলে ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ৬ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে ২০২৪-২০২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার টন। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী চিনিকলে আছে মোট নয়টি সাব জোন। এর মধ্যে পশ্চিমে কাশিয়াডাঙ্গা, নওদাপাড়া, মিলস গেট ক ও মিলস গেট খ জোনে উৎপাদন একেবারেই স্বল্প। কারণ এসব অঞ্চলে অতিরিক্ত নগরায়ণ হওয়ায় আখের চাষযোগ্য জমি কমেছে। এর ফলে উৎপাদনও কম। অন্যদিকে পুঠিয়া, নন্দনগাছী, সরদহ, চারঘাট ও আড়ানীতে উৎপাদন বেশ ভালো। সে ক্ষেত্রে মিলের মোট চাহিদা এ পাঁচটি সাব জোন থেকেই পূরণ করা হয়।
গত ছয় বছরে চিনিকলের উৎপাদন ও আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০২২-২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৫৬ টন। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ ৮৩ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। পরে উৎপাদন হওয়া চিনি ও চিটা গুঁড় বিক্রিসহ সব মিলিয়ে আয় হয়েছে ২০ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ফলে এই মৌসুমেও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয় ৬৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসান গুনতে হয় ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ সালে ৮৮ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০২০-২১ মৌসুমে ৮১ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।