সিন্ডিকেটে নীতিমালা অনুমোদনের পরও তিন মাসে হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) চূড়ান্ত আইন। নীতিমালা অনুমোদন ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, নীতিমালা অনুমোদনের তিন মাস পর জানানো হচ্ছে, জকসু নীতিমালার খসড়াটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এজন্য পুরো প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।
জকসু নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল ছাত্র প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেন, ‘জকসু নীতিমালার যে খসড়া, তা এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়নি। খসড়াটি প্রস্তুত হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অথবা ইউজিসির মাধ্যমে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অধ্যাদেশে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’-এ ছাত্র সংসদের বিষয়টি যুক্ত ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও ছাত্র সংসদ বিধান যুক্ত করা হয়নি। এ কারণে নির্বাচনও হয়নি। যদিও ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও সিন্ডিকেটে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে জকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদল ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য সব ছাত্র সংগঠনই জকসুর দাবি জানিয়ে আসছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বৈরাচারের দোসর ও আওয়ামী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিতের আগে ছাত্রদল জকসু চায় না।
ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র সংসদ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার অন্যতম একটি প্লাটফর্ম। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে এতদিনেও জকসু হয়নি। আমরা অতি দ্রুত সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একটি সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ইতিবাচক ছাত্র রাজনৈতিক ধারা চালু করার জন্য জকসু নির্বাচন কার্যকর করার আহ্বান করছি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ছাত্র সংসদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গড়িমসি করছে তা স্পষ্ট। আমরা আমাদের চার দফা দাবিতে জকসুর রোডম্যাপ চেয়েছি। আশা করছি, তারা শিগগিরই তা ঘোষণা করবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, জুলাই বিপ্লবে পরবর্তী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা। কিন্তু অন্য ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও রোডম্যাপ ঘোষণা করলেও আমাদের প্রশাসন কেন জানি এতদিনে এখনো জকসু আইন পাস করতে পারেনি। আমরা অনতিবিলম্বে জকসু আইন পাস করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাই।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জবি শাখার সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংরক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এটি শুধুই গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব নয়, বরং একটি প্রজন্মকে নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করার নীরব প্রক্রিয়া। এখন সময় এসেছে এই নীরবতা ভেঙে একটি নির্বাচিত, সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক ছাত্র সংসদ গড়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, গত ২ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের যে নীতিমালা পাস হয়েছিল, তা প্রাথমিক ছিল। সেখানে একটা কমিটি গঠন করা হয় যাতে কিছু বাদ না পড়ে। কারণ আমাদের আইনে এটি নেই। তিনি আরও বলেন, নীতিমালা প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে বিধায় সুন্দর ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে নির্দেশ দিয়েছি। এর মধ্যে কিছু পরিমার্জন ও সংশোধন হয়েছে। চূড়ান্ত নীতিমালা সর্বশেষ পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইন আকারে পাস হলে পরবর্তীতে নির্বাচনের বিষয়ে জানানো হবে।