বাইরে নেই কোনো খেলার মাঠ, নেই নিজস্ব কোনো ভবন। আছে মাথার ওপর আকাশ। নিচে রয়েছে কতগুলো বেঞ্চ। এভাবেই চালু হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া রেলস্টেশনে একটি স্কুল। যেখানে প্রতিদিন বিকালে চলে নিয়মিত পাঠদান। যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা হলো পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু।
এই স্কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়। যার প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শুভ চন্দ্র দাস। তিনি নিজেই শিক্ষক এবং একাই ক্লাস নিয়ে থাকেন। যদিও তার পড়ালেখার গণ্ডি বেশি দূর আগায়নি। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই বিগত ২০১৬ সাল থেকেই পথশিশুদের বিনা খরচে এই স্কুলটিতে শিক্ষা দিয়ে আসছেন শুভ চন্দ্র দাস। তিনি তার নিজের পক্ষ থেকে পথশিশুদের বই খাতা দিয়ে থাকেন। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। ছোট ছোট শিশুদের মনযোগ আকর্ষণ করানোর জন্য স্কুল থেকেই হালকা নাশতা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে এই স্কুলটিতে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং জাতীয় সংগীত, শপথ পাঠ করানো হয়, যা শিশুদের দেশপ্রেম, সততা ও সাধারণ জ্ঞান তৈরিতে সাহায্য করে। আবুল কালাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এখানে প্রতিদিনই বিকালে পথশিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। স্কুলটি যে চালায় সে বিনাস্বার্থেই চালিয়ে থাকে। কোনো রকমের খরচ নেয় না। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। পার্শ¦বর্তী মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম বলেন, শুভ বিনামূল্যে বহুদিন ধরে পথশিশুদের পড়াশোনা করায়। প্রতিদিন বিকালবেলা দেখতে আসি। আমরা তাকে উৎসাহ দেই। এটা আমাদের কাছে খুব ভালো লাগে। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শুভ চন্দ্র বলেন, আমি টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারি নাই। কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করব এবং স্কুল শিক্ষক হব। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি যারা টাকার অভাবে পড়তে পারে না তাদের পড়াশোনা করানোর জন্য। আমার স্বপ্ন পথশিশুদের জন্য একটি ভালো স্কুল গড়ে তোলা। তিনি আরও বলেন, এখানে বেশির ভাগ শিশুদের বাবা-মা রিকশাচালক অথবা গার্মেন্ট শ্রমিক। আমি নিজেও একজন নির্মাণ শ্রমিক। বাবা মার কাজের সময় এদের দেখাশোনা করারও তেমন কোনো লোক নেই। আমি এসব শিশুদের বেশির ভাগ সময় ময়লা আবর্জনা নিয়ে ঘাটিঘাটি করতে দেখে সিদ্ধান্ত নেই যে এদেরকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তাই বস্তির পাশের প্লাটফর্মকেই বেছে নিয়েছি উপযুক্ত জায়গা। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। যিনি স্কুলটি পরিচালনা করে থাকেন তিনি যদি আমাদের কাছে আসেন তাহলে দেখব কিছু করা যায় কি না। তবে এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো উচিত। তিনি শিশুদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন।