সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের জব্দ করা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ঘনফুট বালু নিলামে যুবদল নেতার নেতৃত্বে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিলামে অংশ নিতে আসা লোকজনকে বাধা দিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার বালু মাত্র ৪৫ লাখ টাকায় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদের বিরুদ্ধে। প্রতি ঘনফুট বালু মাত্র ২ টাকা মূল্যে কিনে নিয়েছেন তিনি। অথচ ওই বালু নিলামের জন্য এর আগে দুইবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রতিবারই নিলামে এর চেয়ে বেশি মূল্য উঠেছিল। এ ঘটনায় গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন নিলামে অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত ব্যবসায়ী মো. এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া। জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাটের বালির হাওর এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ বালু পরিবেশ অধিদপ্তর জব্দ করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ০৬/২০২৫ মামলায় জব্দ করা ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট ও ০৭/২০২৫ মামলায় জব্দ করা ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট বালু নিলামের জন্য চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সিলেটের নিলামসংক্রান্ত কমিটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। দুই মামলায় জব্দ ২২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৮ ঘনফুট বালু বিক্রির লক্ষ্যে প্রথম দফায় চলতি বছরের ২২ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ২ নভেম্বর উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রথম নিলামে প্রতি ঘনফুট ৯ টাকা ৫০ পয়সা ও দ্বিতীয় নিলামে প্রতি ঘনফুট ৭ টাকা ৬০ পয়সা সর্বোচ্চ দর ওঠে। কিন্তু পরে দুটি নিলাম বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য তিনিসহ অনেকেই ব্যাংক চালান জমা দিয়ে আদালত এলাকায় যান। কিন্তু জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদ ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিলামে অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের বাধা দেন এবং তাদের বের করে দেন। এরপর সিন্ডিকেটের সদস্যরা যোগসাজশ করে প্রতি ঘনফুট বালুর মূল্য মাত্র ২ টাকা ডেকে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্ধারিত হন।
এদিকে কয়েস আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বৈধভাবে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে প্রতি ঘনফুট বালু ২ টাকা করে কিনেছেন। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ প্রতি ঘনফুট বালুর মূল্য পড়বে ২ টাকা ৫০ পয়সা।
জব্দ করা স্থান থেকে বালু পরিবহন ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে যে পরিমাণ বালু উল্লেখ করা হয়েছে সে পরিমাণ বালু জব্দস্থলে নেই। যে কারণে কেউ এর চেয়ে বেশি মূল্য দিতে চায়নি।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া আরও অভিযোগ করেন, কয়েস আহমদ ও তার লোকজন নিলামকৃত বালু পরিবহনের জন্য ছয় মাস সময়সহ কার্যাদেশ নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। পরিবহনে এত দীর্ঘ সময় পেলে কয়েস সিন্ডিকেট নিলামের কাগজ ব্যবহার করে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের সুযোগ পাবে।
এদিকে গোয়াইনঘাটের স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বালির হাওর এলাকায় উত্তোলিত বালু ন্যূনতম ৪০-৪৫ টাকা ঘনফুট দামে বিক্রি হয়। সেই হিসাবে নিলামকৃত বালুর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা।