চীনের উহান থেকে মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এই পর্যায়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালির চেয়ে চীনে করোনার মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখালেও বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃত চিত্র নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে যে বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে দেশটি তা স্পষ্ট। গত ২৮ বছরে এই প্রথম পিছিয়ে পড়ল চীনের অর্থনীতি। খবর বিবিসির।
জানা গেছে, ১৯৯২ সাল থেকে বছরের তিন প্রান্তিকের (প্রতি চার মাসে এক প্রান্তিক) অর্থনৈতিক অগ্রগতির আলাদা হিসাব রাখার প্রচলন করে চীন। প্রতি প্রান্তিকের রেকর্ড রাখতে শুরু করার পর থেকে চীন কখনো বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকোচনের মুখে পড়েনি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সেই রেকর্ড বদলে দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত চীনের সরকারি হিসাব বলছে, এ বছর প্রথম প্রান্তিকে তাদের অর্থনীতি ৬.৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। চীনের এ পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা ও বিশ্লেষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তা ইউয়ে সু বলেন, ‘জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি সংকোচনের কারণে স্থায়ীভাবে আয় হ্রাসের ঘটনা ঘটবে, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থান হারানোর ঘটনা ঘটবে।’ চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দুই দশক ধরে দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চরম বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার সাফল্য দেখায় দেশটি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার আর সেই ধারা বজায় রাখতে পারেনি তারা।
গত ডিসেম্বরে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়াতে শুরু করলে এক মাসের মধ্যে দেশজুড়ে লকডাউন-কোয়ারেন্টিন কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকার। ফলে অচল হয়ে যায় অর্থনীতি এবং পরিণতিতে প্রবৃদ্ধির হারে পিছিয়ে পড়ে তারা। প্রবৃদ্ধির হারের পাশাপাশি আরো কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে চীন। সে অনুসারে গত মাসে চীনের কারখানায় উৎপাদনের হার ছিল ১.১ শতাংশ কম এবং খুচরা বিক্রির হার ছিল ১৫.৮ শতাংশ কম। এ ছাড়া গত মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ শতাংশ, যা গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় ০.৩ শতাংশ কম।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় অঙ্কের প্রণোদনা প্রদানের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন সরকার। সেটা বাস্তবায়ন হলেও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তা কতটা সহায়ক হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ চীনের অর্থনীতি প্রধানত রপ্তানিনির্ভর। করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে যে মন্দার জন্ম দিচ্ছে, তাতে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে চীন কতটা আয় করতে পারবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক