চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে দিন দিন। প্রশাসনের কঠোর লকডাউনের পরও নগরী ও উপজেলাগুলোর অলি-গলিতে মাস্কহীন ঘুরছে সাধারণ মানুষ।
সংক্রমণের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে উপজেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছেই। নতুন রেকর্ডের পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় আগের রেকর্ডও ভেঙে গেছে করোনা আক্রান্তের। জেলা ১৪টি উপজেলার প্রতিটিতেই আক্রান্ত আছেই। তবে চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে বেশি হচ্ছে এই সংক্রমণ।
শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যাল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৭৮৩ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫১০ জন নগরীতে এবং ২৭৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে গত পাঁচদিনেই শনাক্ত হল প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী। রেকর্ডসংখ্যক শনাক্তের দিনেই করোনা কেড়ে নিয়েছে আরও ১০ জনের প্রাণ। যাদের মধ্যে ৮ জনই উপজেলার। আগের দিন বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ছিল ৭২৩ জন এবং মারা যায় ৯ জন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১১ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন প্রতিদিন। এসময় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টে সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ৪৪ মামলা ও প্রায় ১৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছে। বিধিনিষেধ মেনে না চলায় বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মলে অভিযান পরিচালনা করে অর্থদণ্ড প্রদান করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে বলে জানান তিনি। তাছাড়া গত সাতদিনে বিধিনিষেধ না মানায় চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ৭৫১ এবং ৫৪০টি গাড়ি আটক করেছে বলে জানা গেছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সূত্রে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ দিনে এসব মামলা ও গাড়ি আটক করা হয়েছে বলে জানান সিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৭ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে। কঠোর লকডাউনে পুলিশ, র্যাব-বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, উপজেলা সমুহের জনগণ সাধারণত করোনা নিয়ে সচেতন নন। জ্বর-সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। তাই এসব এলাকায় সংক্রমণের হার বাড়ছে। বর্তমানে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে যত বেশি টেস্ট হবে, তত বেশি রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী ৬৩ হাজার ৬৯৬ জন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৯ হাজার ২৮২ জন। আর বিভিন্ন উপজেলার ১৪ হাজার ৪১৪ জন। এদের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন মোট ৭৫৪ জন। এতে ৪৮৮ জন চট্টগ্রাম নগরীর এবং ২৬৬ জন বিভিন্ন উপজেলায়। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত রোগী পাওয়া যায় হাটহাজারীতে ৪৩ জন। তাছাড়া সীতাকুন্ডে ৪২ জন, মিরসরাইয়ে ৩৭ জন, রাউজানে ২৮ জন, রাঙ্গুনীয়ায় ২৩ জন, ফটিকছড়িতে ২০ জন, আনোয়ারায় ১৯ জন, পটিয়ায় ১৬ জন, সন্দ্বীপে ১৫ জন, সাতকানিয়ায় ১২ জন, বাঁশখালীতে ৭ জন, লোহাগাড়ায় ৫ জন, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে ৩ জন রয়েছেন।
অন্যদিকে, গত ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনের হিসাব মতে উপজেলাগুলোতে মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৯৭৭ জন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ২৬৭ জন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন