মাদকে ভাসছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে মাদকাসক্ততে জড়িয়ে পড়ছেন একশ্রেণির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। মাদকের নীল দংশনে জর্জরিত হচ্ছে তাদের জীবন। মাদকাসক্তরা তাদের পরিবারের অশান্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অভিযোগ উঠেছে, কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সরবরাহ করে থাকে।
তিন মাস আগে মাদকাসক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মারা গেছেন এক কর্মচারী। আর ১ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে মাতাল অবস্থায় ক্যাম্পাসে তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোক্তারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলে মাদক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। তবে ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকেই মাদক সেবন করে। বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করা হয়েছে। হাতেনাতে ধরার চেষ্টায় আছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম বলেন, মাদকের ব্যাপারে উপাচার্য কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে পাহারা ও সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭৪ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে দুই শতাধিকই মাদকে আসক্ত। কর্মচারীরা দিনের বেলাতেও প্রকাশ্যে ফেনসিডিল ও গাঁজা সেবন করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী রেজিস্ট্রার বলেন, প্রতিদিন প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় পাঠাগারসহ বিভিন্ন ভবনের পাশে ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, শিক্ষকদের খাওয়া দেখে শিক্ষার্থীরাও ফেনসিডিল এবং গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অনেককে খেতেও দেখেছি। ভীষণ খারাপ লেগেছে। তবে ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করতে হলে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সুস্থ ধারার বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। নগরের মাদক নিরাময় কেন্দ্র 'স্বপ্ন' এর পরিচালক গুলশান আরা ইয়াসমিন জানালেন, তাদের এখানে অনেক মাদকাসক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা বলে জেনেছি। এখানে ভর্তির নিয়ম থাকলেও লোকলজ্জার ভয়ে তারা সন্ধ্যার পর এসে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।