বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেলার নামে অশ্লীলতা জুয়া, পাঠে মনোযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেলার নামে নগ্নতা, জুয়ার রমরমা আসর বসেছে। পৌর এলাকার বেড়াইদেরচালায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে সামিয়ানা টাঙিয়ে প্রায় বছর ধরে রাতভর চলছে এসব অপসংস্কৃতি। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এলাকার সব বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর। বিশেষ করে পড়ালেখায় মনোসংযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা চলাকালেও আসর অব্যাহত থাকে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বার বার এ থেকে পরিত্রাণ চাইলেও ফল মেলেনি। মেলার নামে দিনভর শ্রীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং করে চলে লটারি বিক্রি। শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছেন মেলা নামক ওই আসরে। শিক্ষকদের দাবি, এতে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে ছেলে-মেয়েরা। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির এমন কর্মকাণ্ডে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো বেড়াইদেরচালার জনগণ। প্রশাসনকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি তারা। জানা যায়, কেউ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ জানালে মামলা দিয়ে হয়রানি, জঙ্গী বলে ধরিয়ে দেওয়াসহ নানা হুমকি দিচ্ছেন মেলা সংশ্লিষ্টরা। বেড়াইদেরচালা গ্রামের বৃদ্ধ করম আলী বলেন, গত বছরের অধিকাংশ সময় মেলার নামে অবৈধ কর্মকাণ্ড হয়েছে। ১৫ দিন বিরতির পর গত তিন সপ্তাহ ধরে আবার শুরু হয়েছে। বহু মানুষ মাইকের শব্দে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। চন্নপাড়ার কলেজশিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, বেড়াইদেরচালা ও আশপাশের এলাকায় বাড়ির উঠোন বা বারান্দায় কোনো জিনিস রাখা যায় না। মেলার টিকিট লটারির টাকার জন্য প্রায় প্রতি রাতেই কারও না কারও বাড়িতে হানা দিচ্ছে চোর। বেড়াইদেরচালার আসাদুল্লাহ বলেন, ‘বছরব্যাপী মেলার কারণে সন্তানদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছিল। উপায়ন্তর না দেখে তাদের এ বছর উত্তরার একটি স্কুলে ভর্তি করেছি। মেলা নামক এ অপকর্ম চলতে থাকলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করতে আর কিছু লাগবে না।’ রব্বানী নামে এক নারী জানান, তার নাতনি এবার জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। রাতদিন মাইকের আওয়াজে খুব কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। একইভাবে নানা অভিযোগ করেন বেড়াইদেরচালা ও আশপাশের এলাকার সুলতান হাজী, আলীমুদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, রিয়াজ উদ্দিন, মতিউর রহমান, নাহীন আহমেদসহ অনেকে। শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, ‘কারা কোথা থেকে অনুমতি নিয়ে মেলার নামে অশ্লীলতা চালাচ্ছে জানি না। এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ নিয়ে আমার কাছে এসেছেন। মেলা বন্ধের দাবিতে একাধিক মানববন্ধন হয়েছে। আমি নিজেও তাতে অংশ নিয়েছি। মেলা বন্ধ করা বা এ ব্যাপারে ভূমিকা নেওয়া এখন আমার আয়ত্তের বাইরে।’ গাজীপুরের ডিসি এসএম আলম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে মেলার আয়োজন ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি এখন স্থানীয় প্রশাসন বলতে পারবে। শ্রীপুরের ইউএনও সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলেন, ‘কোনো রকম মেলার অনুমতি সেখানে নেই। একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত মেলার নামে সব আয়োজন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও কীভাবে চলছে আমার জানা নেই।’ মেলা আয়োজকদের একজন মহসীন। মুঠোফোনে তার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দেন।

সর্বশেষ খবর