শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

স্থবির পাবনার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ডুবোচরে আটকা ৩০ জাহাজ

এস এ আসাদ, পাবনা

স্থবির পাবনার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ডুবোচরে আটকা ৩০ জাহাজ

নাব্য সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় স্থবির পাবনার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। স্বাভাবিক অবস্থায় এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫টি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়লেও চলতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি করে জাহাজ ভিড়ছে। অপরদিকে এক সপ্তাহে আরিচা থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত আটটি পয়েন্টে নাব্য সংকটে ৩০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকে আছে। এ অবস্থায় বন্দরের হাজারখানেক শ্রমিকের মধ্যে চার শতাধিক শ্রমিকই বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নৌবন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি উত্তরাঞ্চলের প্রধান নৌবন্দর। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বেশির ভাগ সার এ নৌবন্দরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া তেল, সিমেন্টের ক্লিংকার, কয়লা ও পাথরসহ আরও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ বন্দরে এসে জাহাজ ভিড়ে। প্রতি বছর এ সময় সারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজের ভিড়ে এ নৌবন্দর সরগরম থাকলেও এবার জাহাজ কমে যাওয়ায় নৌবন্দর এলাকা অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পর থেকেই এ নৌবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে নৌবন্দরে কর্মরত এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সবাই বেকার হয়ে পড়েন। পরে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হলেও শ্রমিকদের বড় একটি অংশ বেকারই থেকে যান। শ্রমিকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে চলতি বছরের শেষের দিকে নৌবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো নৌবন্দরটি স্থবির হতে বসেছে। জানা গেছে, বছরের এই সময়েই সবচেয়ে বেশি জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়ার কথা। অথচ নদীতে নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে যমুনা নদীতে বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, কাজিরহাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে নাব্যতা সংকটে আটকে যাওয়া এক সপ্তাহে মাত্র চারটি জাহাজ বন্দরে ভিড়াতে পেরেছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। যে জাহাজগুলো ভিড়ছে সেগুলো নৌবন্দরের ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার আগে প্রায় অর্ধেক পণ্য ছোট নৌযানে খালাস করে ভিড়াতে হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহনের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ঠিকাদাররা পণ্য পরিবহনে নগরবাড়ী ঘাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌঘাট বেছে নিচ্ছেন। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটিতে জাহাজের সংখ্যা দিন দিন কমছে। কার্গো জাহাজচালক আমজাদ হোসেন জানান, পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো আরিচা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আসতে পারছে। কিন্তু এরপর বেড়া উপজেলার নতিবপুর, ব্যাটারিরচর, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা ও মোহনগঞ্জ নামক স্থানে এসে বিপদে পড়ছে। এসব স্থানে যমুনা নদীর গভীরতা সাত থেকে আট ফুটে নেমে এসেছে। অথচ পণ্যবোঝাই জাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে ১০ ফুট গভীরতার প্রয়োজন। তাই জাহাজগুলোকে দৌলতদিয়ায় নোঙর ফেলে ট্রলারসহ ছোট নৌযানে আংশিক পণ্য খালাস করে তারপর নৌবন্দরে আসতে হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি সময়ও অপচয় হচ্ছে। অতিরিক্ত বোঝাই করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। সরেজমিন দেখা যায়, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে তিন-চারটি জাহাজ ভিড়ে রয়েছে। এর সঙ্গে ভিড়ে রয়েছে চার-পাঁচটি সারভর্তি ছোট নৌযান। সেগুলো থেকে প্রায় দেড় শ শ্রমিক সার নামাচ্ছিলেন। অথচ অন্যান্য বছর এ সময় দিনের যে কোনো সময় পাঁচ থেকে ছয় শ শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে বলে কর্মরতরা জানান। বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার ও পেঁচাকোলা গিয়ে দেখা যায়, ২০টি জাহাজ যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। এছাড়াও রাজধরদিয়া, চরশিবালয় ও নাকালির চরে বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ১০টি জাহাজ আটকে আছে। কার্গো জাহাজগুলো রাসায়নিক সার, কয়লা, গম ও চাল নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে যাচ্ছিল। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের ইনচার্জ সুলতান আহমেদ জানান, জাহাজগুলা ৭ ফুট ড্রাফটের বেশি যেতে পারবে না।

নৌ বিজ্ঞপ্তিতে যেটা আছে, কিন্তু কিছু অসাধু জাহাজচালক মিথ্যা ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে এসে এই সমস্যার সৃষ্টি করেন। নদীতে এখন পানি আছে ৮-৯ ফুট। কেউ যদি এর বেশি ড্রাফট নিয়ে আসে সেই জাহাজ তো আটকে যাবে এটাই স্বাভাবিক।  গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরে ৩০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়েছে। গত তিন দিনে আটকে পড়া চারটি জাহাজ ড্রেজিং করে পাড় করা হয়েছে। আটকে পড়া জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অপরদিকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে শ্রমিক তদারকির দায়িত্বে থাকা বন্দর সরদার ওহাব আলী জানান, ‘কম জাহাজ ভিড়ায় নৌবন্দরের তিন ভাগ শ্রমিকের মধ্যে দুই ভাগ শ্রমিকই বেকার। যারা কাজ করছেন, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পাচ্ছেন। এ অবস্থায় চরম দুরবস্থায় দিন কাটছে শ্রমিকদের। সবমিলে বন্দরটি স্থবির হতে বসেছে বলেও তিনি জানান। বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী পরিচালক ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পোর্ট অফিসার সাজ্জাদ রহমান বলেন, এই নৌপথের বাঘাবাড়ী থেকে আরিচা পর্যন্ত অংশে আমাদের মৌসুমের শুরু থেকেই তিনটি ড্রেজার কাজ করে চলেছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছিল ড্রেজিং করে সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল। নদীতে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় আবার সমস্যা দেখো দিচ্ছে। এখন মোট চারটি ড্রেজার কাজ করছে। আশা করছি এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তবে বেশির ভাগ জাহাজই ১০ থেকে ১২ ফুট ড্রাফট নিয়ে বন্দরে আসছে যে কারণেই সমস্যা বেশি হচ্ছে। আরিচা বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শতে বলেন, আমাদের দেশে নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে কমে যাবে স্বাভাবিক, তবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এই সমস্যা হবেই। তারপরও ড্রেজার দিয়ে যতটুকু সম্ভব নদী ড্রেজিং করে চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।

সর্বশেষ খবর