সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষিতে নতুন মাত্রা সূর্যমুখী

মেহেরপুর প্রতিনিধি

কৃষিতে নতুন মাত্রা সূর্যমুখী

কৃষিসমৃদ্ধ জেলা মেহেরপুর। এ জেলায় প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। এবার জেলায় চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুল। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। চাষিদের সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী করে তুলতে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে জেলার একমাত্র আমঝুপি তেলবীজ খামারে এর চাষ করা হয়েছে। খামারের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, বীজের জন্য খামারে প্রতি বছরই কমবেশি সূর্যমুখীর চাষ করা হয়। এবার ২১ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাঠ প্রদর্শনীর আওতায় জেলায় আরও ২৭ বিঘা জমিতে এর চাষ করা হয়েছে। মাঠজুড়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই আসছেন। সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন। মেডিকেল অফিসার বিডি দাস জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টোরেলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল ১০ গুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেল মানবদেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। আমঝুপি খামারের কেয়ারটেকার আমিরুল ইসলাম জানান, ফুল ফোটার পর ফেসবুকে ভাইরাল হলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কাউকে আটকানো যাচ্ছে না। খামারের মূল গেটে তালা লাগানোর পর প্রাচীর টপকে মানুষ ভিতরে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে গেট খুলে দিয়ে লাঠি হাতে জমির মধ্যে আসা প্রতিরোধ করতে হচ্ছে। মেহেরপুর শহর থেকে পরিবার নিয়ে ছবি তুলতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সূর্যমুখীর বাগানের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে স্মৃতিতে ধরে রাখতে স্ত্রী, সন্তান, পরিজন নিয়ে এখানে ছবি তুলতে এসেছি। কারণ মেহেরপুরে এমন পরিবেশ কোথাও নেই। এনামূল হক বলেন, সূর্যমুখীর বাগান একদিকে যেমন সৌন্দর্যবর্ধন করে অন্যদিকে লাভজনক ফসল। এর বিস্তারিত জানার পর আমি নিজে আগামীতে অল্প পরিসরে এ আবাদ করার পরিকল্পনা করেছি। মেহেরপুর বিএডিসির উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার-ওষুধ কম লাগার পাশাপাশি তেমন পরিচর্যাও লাগে না। তাছাড়া অন্যান্য তেলবীজের চেয়েও এতে তেল বেশি পাওয়া যায়। এটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপণ করা হয়। বীজ বপণের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। ১ একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০-৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

সর্বশেষ খবর