রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শহরজুড়ে ময়লার ভাগাড়

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

শহরজুড়ে ময়লার ভাগাড়

ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ পৌর শহর। ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ পৌরসভা। প্রায় দেড় লাখ জনবসতি অধ্যুষিত ৯ বর্গকিলোমিটারের হবিগঞ্জ জেলা শহর নিয়ে গঠিত এ পৌরসভা। প্রাচীন এ পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে পৌরসভার ময়লা- আবর্জনাগুলো হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়াম ও কিবরিয়া অডিটোরিয়ামের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাইপাস সড়কের দুই পাশে ফেলায় স্তূপের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ স্তূপের অদূরে স্কুল-কলেজ, আদালতসহ সরকারি নানা স্থাপনা রয়েছে। আবর্জনা থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধ এ পথে চলাচলকারী যাত্রীদের নিত্য দুর্ভোগের কারণ।  পৌর কর্তৃপক্ষ বলে যাচ্ছেন ডাম্পিং স্পট হলে অবসান ঘটবে এ দুর্ভোগের। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে ডাম্পিং জোন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। তবে এ যাত্রায় কাজটি হয়ে যাবে বলে জানালেন পৌর মেয়র। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় কয়েক বছর ধরে বাইপাস সড়কের দুই পাশে ও হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াই মুখ এলাকার পুরাতন ব্রিজের নিচে ও আশপাশ এলাকায় ময়লা  ফেলে আসছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। দীর্ঘদিন ধরে দুটি এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বিশাল আকার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। এ স্তূপগুলো প্রতিদিনই বড় হচ্ছে। ফলে ওই দুটি এলাকা দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আধুনিক স্টেডিয়ামে আসা খেলোয়াড়রাও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। স্টেডিয়ামের আবর্জনা স্তূপের আশপাশে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা জজ আদালত, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, আনসার কর্মকর্তার কার্যালয়, কিবরিয়া অডিটোরিয়ামসহ নানা স্থাপনা। প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। নাক-মুখে রুমাল গুঁজেও মুক্তি মেলে না দুর্গন্ধ থেকে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শিগগিরই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রা বলছেন, পৌরসভার ডাম্পিং স্পট না থাকায় শহরের ভিতরেই এমন ময়লার ভাগাড় তৈরি করা উদাসীনতার পরিচয়। এতে পৌর নাগরিকসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আশপাশেই রয়েছে বড় বড় অসংখ্য হাওর। ওইসব জায়গাতেও অস্থায়ীভাবে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা যেত। হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন কলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জেলার ঐতিহ্য এখন আধুনিক স্টেডিয়াম। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধে এখানে ভেন্যু দিতে সম্মত হয় না কেউ। খেলোয়াড়রাও আসতে চান না নিয়মিত। পাশের দোকানে এক কাপ চা খেতে গেলে শুরু হয় মাছির উপদ্রব। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান না হলে মিলবে না আধুনিক স্টেডিয়ামের ফল। বৃন্দাবন সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাকিম জানান, ময়লার কারণে বাইপাস সড়কে চলাচলকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশি বাতাস হলে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ। শিগগিরই ময়লার ভাগাড়টি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। কলেজছাত্রী রিপা আক্তার জানান, বাইপাস রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়।

কিন্তু যখন ময়লার স্থানটি দিয়ে যাই তখন আমাদের চরম দুর্গন্ধের শিকার হতে হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ শহরের কোথাও অবসর সময় কাঠানোর সুযোগ নেই। আধুনিক স্টেডিয়াম হওয়ার পর বিকাল বেলা এখানে আসতেন অনেকেই। কিন্তু আবর্জনার কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা অবিলম্বে ওই স্থানটি থেকে ময়লা-আবর্জনাগুলো পরিষ্কার দেখতে চাই। প্রতিদিন স্টেডিয়ামে খেলতে আসা সোহেল রানা বলেন, ‘হবিগঞ্জ শহরে নির্মিত আধুনিক স্টেডিয়ামটি ঘিরে তৈরি হয়েছিল জেলার ক্রীড়াঙ্গনের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এখানে বিভিন্ন টুর্নামেন্টসহ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এই স্টেডিয়ামে  ঢোকার প্রবেশমুখে ময়লার স্তূপ। শুধু প্রবেশমুখেই ময়লার ভাগাড় নয়, এর দুর্গন্ধ স্টেডিয়ামের ভিতরে পর্যন্ত পৌঁছায়।’ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কামাল হোসেন জানান, ‘জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই কলেজের পাশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় মেনে নেওয়া যায় না।  এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনিকে জানান, প্রতিদিন শহরের বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। কিন্তু ডাম্পিং স্পট না থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ময়লা ফেলার জন্য সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নতুন জায়গা নির্ধারণের টেষ্টা করছি। আশা করি অচিরেই এর সমাধান হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর