কালের পরিক্রমায় খরস্রোতা চেত্রা নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে নদী দখলের মহোৎসব। নদীটির দুই পাড় দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন চলছে মাঝখানের অংশ দখলের চেষ্টা। নদীর মাঝখানের সামান্য অংশ খালি রেখে পুরো নদীতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। শুষ্ক মৌসুমে চেত্রা নদীতে কম করে হলেও ৫/৬ ফুট পানি থাকত। পাল তোলা নৌকা চলত। দুই পাড়ের মানুষদের পারাপারের জন্য বড় একটা খেয়া নৌকা ছিল। বর্ষাকালে চেত্রা নদীতে প্রচ- ঢেউ উঠত। এখন দেখে মনে হয় না এটি সেই আগের প্রমত্ত চেত্রা নদী। বর্তমানে নদীটি সাপের দেহের মতো একে বেঁকে সরু একটি লম্বা খালে রূপান্তরিত হয়েছে। নদীতে এখন হাঁটু পানি। চৈত্র মাসে একেবারে নদীটি শুকিয়ে মরে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় নদীর পাড়ঘেঁষা চাষিরা সেচ সংকটে ফসল আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়ে। প্রায় এক হাজার জেলে পরিবার এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জেলে পরিবারগুলো ভীষণ দুর্দিনে দিনাতিপাত করছেন। ঐতিহ্যবাহী চেত্রা নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। জেলার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহমান তিতাস থেকে উৎপত্তি হয়ে চেত্রা নদীটি অরুয়াইল, রানীদিয়া, সরাকান্দি হয়ে রাজাপুর গিয়ে চান্দু মুন্সির খাল নামে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলেছিল। এখন রাজাপুর এলাকায় চেত্রা নদীটির কোনো চিহ্নই নাই। ভরাট হয়ে গেছে নদীর মুখ এলাকা। জমি বানিয়ে মানুষ এখন চাষাবাদ করেছে। এক সময় প্রমত্ত থাকলেও এই নদীতে এখন আর সারা বছর পানি থাকে না। পলি জমে নদীর তলদেশ ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় লোকজন নদীর দুই পাশ ভরাট করায় ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে নদী। গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে। নদীটির এক প্রান্তে মুখ বন্ধ হয়ে পানি প্রবাহ না থাকায় এই দশার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে পানির মৃদু প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে অনেকাংশে নদীর বুক দখল করে ফসল ফলানো হচ্ছে। নদীটির উত্তর-পশ্চিমাংশ রাজাপুর, দুবাজাইল, সরাকান্দি এলাকার নদীর মাঝ পর্যন্ত দখল করে ফসল আবাদ করা হচ্ছে। সরু খালের মতো একটা চিহ্ন রয়েছে মাত্র। রানীদিয়া এলাকার মাওলানা সামাদ মিয়া (৬৮) জানান, চেত্রা নদী দিয়ে আমরা নৌকায় পাল তুলে মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার করতে যেতাম। এখন চেত্রা নদীর বুকে ফসলের মাঠ। রাজাপুর এলাকায় চেত্রা নদীর কোনো চিহ্নই নাই। একটি খালের মতো রেখা আছে মাত্র।
অরুয়াইল ইউনিয়নের জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিখিল দাস বলেন, এক সময় এই নদীতে অনেক পানি থাকত। আমরা প্রায় সহস্রাধিক জেলে চেত্রায় জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদীতে পানি নাই। অনেক প্রভাবশালী লোক নদী দখল করে বোরো ধান রোপণ করেছে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। নদীটি দখলমুক্ত ও খনন করা না হলে আমরা অরুয়াইল থেকে চলে অন্যত্র চলে যেতে হবে। অরুয়াইল আর জেলে পরিবার থাকবে না। অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বলেন, এক সময়ে চেত্রা নদী ছিল খুবই স্রোতস্বিনী। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। এখনই দখলমুক্ত করতে না পারলে এক সময় নদীটি হারিয়ে যাবে। এর সঙ্গে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত নদীটি পুনঃখননের। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম মৃদুল বলেন, এই নদীটি দখলের ব্যাপারে আমি জানি না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে নদীটি দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।