শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

পানি নেই, মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে পাট

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পানি নেই, মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে পাট

পাটের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর জেলায় এ বছর পাট নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে কৃষকেরা। গত বছরের তুলনায় অধিক জমিতে পাট আবাদ করে এবার লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে তাদের। ভরা বর্ষা মৌসুমে মাঠে-ঘাটে এবং খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকের। অনেক স্থানে পাট মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই পাট কেটে জাগ দিতে না পারায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখছেন। কেউ কেউ দূরের নদীতে কিংবা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে মাটির গর্তে পাট জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। পাট জাগ দিতে পানির জন্য হাহাকার করছেন কৃষকেরা। এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। প্রথমদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে পাটখেতে পানি থাকলেও সে পানি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ফলে পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাটগাছ মরে যেতে শুরু করে। তারপরও জেলায় রেকর্ড পরিমাণ ফলন পেয়েছে কৃষক। বর্ষাকালেও তীব্র তাপদাহ ও ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাট। এখনো মাঠের পর মাঠ পাট রয়ে গেছে জমিতেই। বর্তমানে পাট না কাটতে পারা এবং জাগ দিতে না পারায় লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে নিচু জমিতে মাটিচাপা দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ বছর জেলার আটটি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় বেশি পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ করা হয়। গত বছরের চেয়ে এ বছর দুই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এ বছর ফসলে রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাট চাষ ভালো হয়েছে। দামও আগের চেয়ে মোটামুটি ভালো। এতে ভালো লাভের আশা করছেন তারা। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা ও নালায় পর্যাপ্ত পানি নেই। এ কারণে পাট কাটতে পারছেন না তারা। ভারি বৃষ্টিপাতে ডোবা-নালা পানিতে ভরাটের আশায় অনেকেই পাট কাটলেও সেগুলো জাগ দিতে না পেরে মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মাটিচাপা দিয়ে জাগের ব্যবস্থা করছেন তারা। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে তেমন পানি জমেনি। এ ছাড়া জমি থেকে নদী বা খাল অনেক দূরে হওয়ায় পাট নেওয়া কষ্টকর হচ্ছে তাদের। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানে বোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে যাচ্ছেন পাট। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই অনেকেই নিচু জমিতে মাটিচাপা দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর