মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভেজাল পশুখাদ্য তৈরির সিন্ডিকেট

প্রতারণার শিকার খামারিরা আক্রান্ত হচ্ছে গরু-ছাগল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

পশু সম্পদ উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সারা দেশে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন খামার। শিক্ষিত বেকার তরুণরাও এগিয়ে আসছেন পশু পালনে। ঠিক তখন ভেজাল ও মানহীন খাদ্য তৈরি করে পশু সম্পদ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ভেজাল পশুখাদ্য তৈরি ও সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে পশুখাদ্য তৈরি হয় তার প্রধান উপকরণগুলোই ভেজালে ভরপুর। বিশেষ করে ডিওআরবি ও রাইস ব্রানে মেশানো হচ্ছে খাবার অযোগ্য সামগ্রী ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল। এতে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র লাভবান হলেও ভেজাল খাদ্য খেয়ে গবাদি পশু, মাছ-মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নির্ধারিত দামে ভেজাল খাদ্য কিনে লোকসান গুনছেন খামারিরা। অনেকে পোলট্রি শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, শেরপুর উপজেলার রনবীরবালা ঘাটপার থেকে শালফা-বথুয়াবাড়ী পর্যন্ত চার-পাঁচটি গুদামে পশুখাদ্য তৈরির উপাদান ডিওআরবি ও রাইস ব্রানে মেশানো হচ্ছে এক প্রকার সিরামিক্সের ধুলা ও ডলোচুন। যাতে খাবারের ওজন বাড়ে। পরে তা বস্তায় ভরে পশুখাদ্য তৈরির কারখানায় পাঠানো হয়। শেরুয়া বটতলা থেকে ব্র্যাক-বটতলা, তালতলা ফরেস্ট গেট হয়ে শেরুয়া বটতলা রোড, মির্জাপুর থেকে খানপুর রোড, মির্জাপুর থেকে রানীরহাট এবং ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন গুদামসহ সাউদিয়া পার্ক রোডের কয়েকটি গুদামে একই চিত্র দেখা যায়। জানা যায়, কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই শেরপুর উপজেলায় অর্ধশতাধিক ভেজাল পশুখাদ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তিনটি ভেজাল পশুখাদ্য তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। জরিমানাসহ কারখানাগুলো সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের পর দুই-তিন দিন বন্ধ রেখে আবার শুরু হয় কারখানাগুলোর কার্যক্রম। খামারি আতাউর রহমান ও আবদুল মান্নান জানান, ভেজাল ও মানহীন পশুখাদ্যে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। এমনকি নামিদামি কোম্পানির প্যাকেটেও লেভেল লাগিয়ে বিক্রি করায় কোনটি আসল আর কোনটি নকল চেনাই কঠিন। এসব ভেজাল খাদ্যের প্যাকেটে লেখা নির্ধারিত দামেই কিনছেন তারা। এসব খাদ্য খাওয়ানোর পর কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে খামারের প্রাণী। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। সোলায়মান আলী ও শফিকুল ইসলাম নামে দুই ব্যবসায়ী জানান, ডিওআরবি ও রাইস ব্রানের বাজার চড়া থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ওই দুই ধরনের পণ্যে ভেজাল দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসার মাঠে টিকতে পারছি না। ফলে আমরাও ওই পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রায়হান বলেন, এসব ভেজাল খাবারে পশু ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে মানহীন পশুখাদ্য কিনে খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। অনেক বিষয় এখনো অজানা। ভেজাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর