নানান সংকটে জর্জরিত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল। ৪১ বছরেও পরিবর্তন হয়নি হাসপাতালের চিত্র। আধুনিকায়ন হয়নি কোনো কিছুই। চার যুগের বেশি সময়েও চালু করা সম্ভব হয়নি আইসিইউ, এনআইসিইউ, সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিট। অভিযোগ রয়েছে- নাক, কান, গালা, চক্ষু ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাগজেকলমে থাকলেও সশরীরে দেখা যায় না। হাড়ভাঙা রোগীদের ব্যান্ডেজ করেন ওয়ার্ড বয়। নাক, কান, গলার সমস্যা হলে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। অভিযোগ আছে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে মেডিকেল কলেজ সংযুক্ত করা হলেও সংকট নিরসনে কার্যত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে গড়ে ওঠে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল। দুর্গম উপজেলাবাসীর জন্য এ হাসপাতালটি উন্নত চিকিৎসার আশার আলো। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নানান সমস্যা নিয়ে রোগী প্রতিদিন এ হাসপাতালে ভর্তি হলেও মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, চর্ম, চক্ষু, নাক, কান, গলা, শিশু, ডেন্টাল প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ইপিআই সেবার কথা বলা হলেও তা আছে শুধু নামেই। রোগীরা বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন হৃদরোগ, নাক, কান, গলা, চক্ষু ও অর্থোপেডিক সেবা থেকে।
সম্প্রতি রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মো. জাফর বলেন, বৃহত্তর একটি জেলার হাসপাতালের চিত্র যদি এমন হয় মানুষ কোথায় যাবে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত মেডিকেল কলেজ। তবু রোগী সেবা পাচ্ছেন না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে থাকিয়ে থাকতে হয়। এ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার রোগী কিংবা আহত কেউ চিকিৎসাই পান না। সম্প্রতি জনি নামে এক যুবককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আইসিইউ না থাকায় তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। পথে মারা যান তিনি। এভাবে ৭৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। এমন ঘটনা নতুন কিছু নয় রাঙামাটিবাসীর জন্য। একজন ডেঙ্গু রোগী অভিযোগ করেন, জ¦র পরিমাপ করার জন্য থার্মোমিটার নেই হাসপাতালে। বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি রোগীর স্বজন তানিয়া আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ইসিজি করা হলেও ইকো করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্লাডসহ অন্যান্য সব পরীক্ষা হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন প্যাথলজি থেকে করে আনতে হয়। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে রোগীর তুলনায় শয্যা সংকট রয়েছে। অনেক শ্বাসকষ্টের রোগী রাখা হয় মেঝেতে। রোগীর জন্য বরাদ্দ সিটগুলোতে থাকে না বালিশ ও চাদর। যা আছে তা-ও নোংরা অপরিচ্ছন্ন। নাপা, প্যারাসিটামল ছাড়া হাসপাতালে মেলে না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। সংকটের কথা স্বীকার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈকত আকবর চৌধুরী, বলেন, হাসপাতালের পাশে ১১ তলা একটি ভবনের কাজ চলমান। ওই ভবনটি চালু হলেও সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ভবনটি আধুনিকায়ন করা হবে। তখন আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।