শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সভাপতি ও সহ-সভাপতি গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটে। এতে বাবু নামের একজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় গ্রুপের ১০ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ বাবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, বিকাল ৩টার দিকে সহ-সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ভিসির বাসভবনে ভাংচুর চালায় এবং নিয়োগ বোর্ড পণ্ড করে দেয়। সংঘর্ষের ঘটনায় দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড ছিল। বেলা ১১টার দিকে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনসহ তিনজন শিক্ষক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে দেখা করে বোর্ড স্থগিত করার দাবি জানান। এসময় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু গ্রুপের জুয়েল রানা হালিমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা ভিসির কাছে একই দাবি জানিয়ে প্রশাসন ভবনে হট্টগোল শুরু করে দেয়। বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামের গ্রুপের ১৫-২০ জন কর্মী প্রশাসন ভবনে আসলে উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়লে সাজ্জাদুর রহমান বাবু নামের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা দলীয় টেন্টে এসে অবস্থান নিলে সহসভাপতি গ্রুপের কর্মীরা এসে তাদের উপর হামলা চালায়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর আলতাফ হোসেন, শামিম হোসেন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত হাওয়ার পরিবর্তে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়। আহতরা হলেন যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান, সভাপতি গ্রুপের শিশির ইসলাম বাবু, আতাউর রহমান, কামরুজ্জামান সাগর, নোমান, রাজু আহমেদ। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে এবং গুলিবিদ্ধ বাবুকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংঘর্ষের পর সভাপতি গ্রুপ দলীয় টেন্ট ও সহসভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের পশ্চিম পাশ্বে অবস্থান করছিল। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে বেলা ৩টার দিকে সহসভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ভিসি বাসভবনে গিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং নিয়োগ বোর্ড পণ্ড করে দেয়।
এবিষয়ে সহ-সভাপতি গ্রুপের জুয়েল রানা হালিম বলেন, ‘ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে গেলে সভাপতি গ্রুপের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত ভাবে আমাদের উপর গুলি চালায়। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে বহিরাগতর সন্ত্রাসীরা ভিসি অফিসে ভাংচুরের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করেছে মাত্র।’
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা (ওসি) চৌধুরী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পরে তাৎক্ষণিক প্রক্টরিয়াল বডি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
বিডি-প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/রশিদা/মাহবুব