অবকাঠামো আছে, ছাত্র-ছাত্রী আছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিনামুল্যে বই প্রদান ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থাও রয়েছে, শুধু নেই শিক্ষক বেতন-ভাতা। এ অবস্থায় চলছে সিরাজগঞ্জের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলো। দীর্ঘ ৩২ বছর চাকুরি করেও কেউ এক টাকাও বেতন পায়নি। বেতন-ভাতা না পেয়ে শিক্ষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিভিন্ন সরকার বেতনের আশ্বাস দিলেও কেউ বাস্তবায়ন করেনি। আজ দুপুরে প্রায় শতাধিক শিক্ষক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিরাজগঞ্জ অফিসে এসে এসব দুর্দশার কথা জানান। তারা আরও জানান, একই সাথে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন স্কেল ঘোষণা হলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কপালে তা জোটেনি। তবুও বেতন পাবে-এমন আশায় বুকে নিয়ে তারা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ১১০টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে। এ সকল মাদরাসায় প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে। মাদরাসাগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সরকার থেকে মাদরাসাগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই ও শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মাদরাসাগুলোর ফলাফল বেশ ভাল। খাগা রহমতুল্লা মাদ্রসায় ৩ জন ছাত্রীসহ কয়েকটি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা বৃত্তিও পেয়েছে। এসব মাদরাসার ছয় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
দীর্ঘদিন চাকুরী করার পর অনেক শিক্ষক মারা গেছেন আবার অনেকে বিনা বেতনে অবসর নিয়েছেন। তারপরেও থেমে নেই ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষার আলো ছড়ানো। বিনা বেতনে শিক্ষকতার পাশাপাশি জাতীয় স্কেলের দাবিতে আন্দোলনও শুরু করেছেন এসব শিক্ষকেরা। বুধবার সকালে বেতন স্কেলের দাবিতে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন তারা। এসময় শিক্ষক নেতা মফিজ উদ্দিন, আব্দুল হামিদ, শাহজাহান আলী, শাহ আলম, রেজাউল করিম, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল মজিদ, শহিদুল ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
রায়গঞ্জ হাড়নি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হামিদ জানান, সংসারে চারজনের সদস্য। প্রায় ২০ বছর ধরে চাকুরী করছি। কোন বেতন পাইনা। শিক্ষকতার পর কৃষি-হালচাষ করে মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছি। তার মতো একই অবস্থা বারইবাঘ মাদরাসার শিক্ষক লিয়াকত আলী, খোর্দ্দবয়ড়া ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক মফিজ, বেলকুচির দৌলতপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক নুরুল ইসলামের।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সিরাজগঞ্জের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সম্পাদক মাও. মো. আব্দুল বাতেন শেখ জানান, সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দাবি জানিয়েছিলাম, আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কিছুই করেনি। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব উল্লেখ করে এই নেতারা বলেন, সরকার যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর এসব শিক্ষকদের দুর্দশার কথা ভেবে অবিলম্বে জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করেন।
বিডি প্রতিদিন/১৬ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-১৯