বছর জুড়ে অপেক্ষার পর বৈসাবি এলে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা উৎসবে মেতে উঠে। পাড়ায় পাড়ায় নেচে গেয়ে মিশে যায়। চার দিকে বইয়ে যায় উৎসবের আনন্দের জোয়ার। সবমিলে বৈসাবির অন্যরকম উচ্ছাস ছড়িয়ে পরেছে পাহাড়ে। ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিজু-সাংগ্রাই-বৈসক-বিষু অর্থাৎ বৈসাবির আমেজে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এখন উৎসবের নগরী। প্রতিদিন বসে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে গান ও নাচের জমজমাট আসর। আর এ উৎসব চলবে আগামী ১৫এপ্রিল পর্যন্ত।
রবিবার সকালে রাঙামাটি পৌরসভা চত্ত্বরে চারদিনের বৈসাবি উৎসবের নানা অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে-১২এপ্রিল অথাৎ চৈত্র মাসের ২৯ ফুলবিজু, ১৩এপ্রিল মূলবিজু, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ চাকমা ভাষায় গোজ্জ্যাপোজ্জ্যা ও ১৫ এপ্রিল পালন করা হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব। এরমধ্যে চলবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সংগীত, জুম খেলাধুলা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পণ্য প্রদর্শনী, বেইন বোনা প্রতিযোগিতা ও চাকমা নাট্যোৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জোনাকী চাকমা বলেন, চাকমা রীতি অনুযায়ী চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ গঙ্গ্যাদেবীকে ফুল উৎস্বর্গ করে মূলত সূচনা করা হয় ফুলবিজু। পরদিন পালন করা হয় মূলবিজু। সেদিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বিভিন্ন সবজির সংমিশ্রণে একটি বিশেষ খাবার তৈরি করে। যার নাম রাখা হয়েছে পাচন। সেদিন চলবে দিনব্যাপী অতিথি অ্যাপায়ণও। আর বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। চাকমা ভাষায় এটা গোজ্জ্যাপোজ্জ্যা দিন বলা হয়। সর্বশেষ মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসবের মধ্যে সম্পন্ন হবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অর্ধমাসের নানা কর্মসূচী। এভাবে পার্বত্যাঞ্চলের ১০ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে। যেমন-চাকমারা-বিজু, মারমারা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু ও অহমিয়ারা-বিহু নামে পালন করে থাকে। অথাৎ সবমিলে এর নাম রাখা হয় বৈসাবি।
এদিকে ফুলবিজু উপলক্ষে রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এব্যাপারে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা জানান, শহরের গর্জনতলী ত্রিপুরাপল্লীতে ফুল বিজুর আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সকাল ৭টায় কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো উৎসব। পরে বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান ও বস্ত্রদান, ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীদের গড়াই নৃত্যসহ আলোচনা সভা, সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণ ও পিঠা আপ্যায়ণ।