নেত্রকোনা জেলার দশ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হাওর দ্বীপ উপজেলা খালিয়াজুরী। যার পুরোটাই পানির উপর। এই বছর আগাম পানি চলে আসায় হাওরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল তলিয়ে একবারে নিঃস্ব এ উপজেলার ধনী-গরীব সকল শ্রেণির মানুষ। আর এ এলাকার মানুষের জীবন সংগ্রাম নিজ চোখে দেখার জন্যই আগামী ১৮ মে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী উপজেলা পরিদর্শনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরবাসীর মনে নতুন করে আশার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সর্বস্থরে চলছে ধোয়ামুছাসহ নানান প্রস্তুতি। সাজসাজ রব বিরাজ করছে সর্বত্র। এতে করে হাওর এলাকার ক্ষত্রিগ্রস্থ অসহায় বেশ কিছু মানুষের কয়েকদিনের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়েছে। তবে বাড়তি এ সুযোগ হলেও তা অপ্রতুল বলে দাবি শ্রমিকদের। স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল সেক্টরের বড়বড় কর্মকর্তারা কাজে বেশ মনোযোগি হয়েছেন।মেরামতসহ ধুয়ে মুছে রং করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোকেও সাজানো হচ্ছে সতুন রূপে। সেই সাথে হেলিপ্যাড নামার জায়গা তৈরিসহ জনসভাস্থল এমন কি আশাপাশের এলাকাতেও চলেছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন এমন বড় বড় মানুষেরা যদি কিছুদিন পরপরই আসতেন। তাহলে অন্তত তাদের কষ্টের চেহারা একদিন পাল্টে যেতো সত্যি সত্যিই।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র খালিয়াজুরী উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান খান বলেন, মোট ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৭ জন নারী এখানে কাজ করছে। তারা বাড়তি পাচ্ছে দৈনিক ১৫০ করে। তারা সবাই আর ই আর এমপি প্রকল্পের মহিলা। প্রতি মাসে তারা একটা ভাতা পায়।
খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুজ্জামন শোয়েব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই এলাকা নিজ চোখে দেখে যাবেন। সেই সাথে এই জনপদের আগামী ফসল উঠা পর্যন্ত ত্রাণ সহয়তা, ঋণ মওকুফ, স্থায়ী বাঁধ বন্দোবস্থ করে যাবেন বলে আশা করছেন। পাশাপাশি অল্প ত্রাণ নিয়ে অভিযোগের ব্যাপরটি পরবর্তীতে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গণি বলেন, তারা এলাকার স্বাস্থ্য সেবা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি বিষেশ কেবিনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। নৌ-এম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় মাইকিং চলছে। পানি বাহিত কোন রোগ আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত পহেলা এপ্রিল বাঁধ ভেঙে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন-মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরীর ৭০ হাজার হেক্টর জমি কাচা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে হাওরপাড়ের প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার কৃষক চরম ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি কার্ড বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার