বরিশাল থেকে সড়ক পথে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় যেতে আগে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা সময় লাগতো। ১০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক পথের ৫টি পয়েন্টে ছিলো ফেরি। এ কারণে ঘাটে ঘাটে সিমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের। গত কয়েক বছরে ৪টি পয়েন্টে সেতু নির্মিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়েছে। বেঁচে গেছে অর্ধেক সময়। তারপরও বাকী থাকা একমাত্র লেবুখালী ফেরীঘাট পয়েন্টে দুর্ভোগ নিত্য সঙ্গি পরিবহন চালক ও যাত্রীদের।
ব্যস্ততম এই মহাসড়কে জনদুর্ভোগ কমাতে গত বছর লেবুখালী পয়েন্টের পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয় সরকারের সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রনালয়। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সেতু নির্মাণের কাজ। আর এতেই উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে ওই এলাকায়। বেড়েছে জমির দাম। শিল্প করার জন্য জায়গা খুঁজছেন উদ্যোক্তারা।
সেতুর উত্তরপ্রান্তের বাকেরগঞ্জের ভারপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, স্বপ্নের পায়রা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে কুয়াকাটা এবং নির্মানাধীন পায়রা বন্দরের সাথে বরিশাল সহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। সাশ্রয় হবে সময়। তিনি বলেন, পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হতেই সেতুর দুই প্রান্তে সহ আশপাশের এলাকায় জমির দাম বেড়ে গেছে হু হু করে। উদ্যোক্তারা শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক জমি খুঁজছেন।
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৬তম কিলোমিটারে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় গত বছরের ২৪ জুলাই। ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার দির্ঘ এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ বিশিস্ট সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে পর্যটনের কথা মাথায় রেখে তৃতীয় কর্নফুলি সেতুর আদলে ‘এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট’ পদ্ধতিতে। কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় চার লেন বিশিস্ট সেতু নির্মানের কাজ করছে চীনের প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড এন্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লি.।
সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীন-ভারতসহ বিদেশী অর্ধ শতাধিক প্রকৌশলী ও কারিগর। তাদের মতে, বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ খুবই ভালো এবং নিরাপদ।
সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রনালয়ের পায়রা সেতু প্রকল্পের কনসালট্যান্ট আবাসিক প্রকৌশলী মনজিত কুমার সাহা জানান, এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট’ পদ্ধতিতে চার লেন বিশিষ্ট নান্দনিক সেতুটি দাঁড়িয়ে থাকবে ৩৫০টি পাইলের উপরে। ইতিমধ্যে সেতুর দুই প্রান্তে ৯০টি পাইল নির্মিত হয়েছে। সেতুর মোট কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭ ভাগ। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত ৩৩ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে পায়রা সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
পায়রা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শরীফ সজিব বলেন, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ। কোন অনাকাংখিত ঘটনা না ঘটলে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ‘এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতির’ পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার